- মতিন আবদুল্লাহ
শহর হবে পরিছন্ন। ঝকঝকে-তকতকে। মৃদুমন্দ বাতাস বইবে। নাগরিকরা বসবাস করবে আনন্দে। কারও মনে নগর নিয়ে থাকবে না কোনো দুঃখ-কষ্ট। আর রাজধানী শহর। সে তো হবে আরও পরিপাটি। কেননা এই শহরের ওপর নির্ভর করে একটি দেশের মর্যাদা। এমন শহর কার না কামনা। প্রতিটি নগরবাসীই এমনটি কামনা করে।
কিন্তু আমরা যদি আমাদের ঢাকা শহরের দিকে তাকাই তাহলে কি দেখি। ময়লা-আর্বজনায় শ্রীহীন থাকে এ শহর। ময়লাসৃষ্ট রোগ-জীবাণুতে আক্রান্ত হচ্ছে শহরের বাসিন্দারা। জেনে-শুনে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের শহরটাকে ধ্বংস করছি। ভরাট করেছি প্রাকৃতিক জলাধার পুকুর, ডোবা। খাল-নদী গিলে খাচ্ছে দখলদাররা। পার্ক দখল হয়ে যাচ্ছে। বৃক্ষগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব করা হচ্ছে।
আমাদের শহরের জন্য আমাদের মায়া না থাকলেও ভিনদেশীদের মায়া-মমতা রয়েছে। অনেক ভিনদেশীর আমাদের এই শহরের জন্য হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। তারা দুঃখ পায় আমাদের এসব কর্মকাণ্ডে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ আমাদের দেশের শহরসহ বিভিন্ন বিভিন্ন উন্নয়নে কর্মকাণ্ডে সাহায্য-সহায়তা করে থাকে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। ঢাকা শহর পরিছন্নতা কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে ছুটে এসেছে তিন জাপানি। এদের দুজন তরুণী, একজন তরুণ। প্রতিদিন তারা পরিবেশ উন্নয়নে পরিছন্নতা কার্যক্রমের গুরুত্ব বোঝাতে নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। ছাত্রছাত্রীদের বোঝাচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে বোঝাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সহায়তা করছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ঢাকা সিটি করপোরেশনকে তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরছেন।
এই জাপানি তিনজনই মাস্টার্স পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনজনের কেউ এখনো বিয়ে করেননি। তারা হলেন_ মিউ কি অপু। বয়স ২৮ বছর। ২০১১ সালের শুরুতে ঢাকায় এসেছেন। প্রথমে একা একা কাজ শুরু করেছেন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের সহায়তায় তারা এ কাজ করছেন। অপুর পরে এসেছেন হিগা সিনো। বয়স ২৮ বছর। একটি জাপানি কোম্পানিতে চাকরি করতেন তিনি। দুই বছরের জন্য ছুটি নিয়ে এসেছেন ঢাকা শহরের পরিছন্নতা কার্যক্রমে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে। লেখাপড়া শেষ করে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে চলে এসেছেন মিচিকো কোগা। বয়স ২৪ বছর। এখন তারা তিনজন একত্রে কাজ করছেন। বর্তমান তাদের কর্ম এলাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২, ৩ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে।
জাপানি এই স্বেচ্ছাসেবকদের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ প্রতিদিন। নানা বিষয়ে কথা হয়। মিউ কি অপু বললেন, তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন বিগত ১৮ মাস ধরে। আর চার মাস পর দেশে ফিরে যাবেন। দেশে ফিরে নতুন করে চাকরি খুঁজে যোগদান করবেন। এরপর বিয়ে করবেন। বাংলাদেশ এবং এদেশের মানুষকে তার অনেক ভালো লাগে বলে জানালেন। হিসা সিনো ও মিচিকো কোগাও জাইকার মাধ্যমে এ দেশে এসেছেন। এখানে তাদের তিনজনের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়। তারা এখন একযোগে কাজ শুরু করেছেন। থাকবেন পুরা দুই বছর। এর মধ্যে একবার নিজ দেশে বেড়াতে যাবেন। জানালেন, তাদের দেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে যায়। বাংলাদেশ তাদের অনেক ভালো লেগেছে। এদেশের জন্য কাজ করতে পেরে তারা আনন্দিত। রাজধানী ঢাকার আয়তন এখন ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার। এই নগরীতে বসবাস প্রায় সোয়া দুই কোটি লোকের। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিকটন বর্জ্য তৈরি হয়। আমাদের ব্যবস্থাপনায় প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার মেট্রিকটন বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়। বাকি ময়লা-আর্বজনা যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। এসব আবর্জনা থেকে নানাবিধ রোগ-জীবাণু ছড়ায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখানে ক্যান্সারের জীবাণু খুঁজে পেয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ জাপান। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে জাপান। ঢাকা শহরের ময়লা-আর্বজনা অপসারণে দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়তে জাপানি সাহায্য সংস্থা বা জাইকা ২০০০ সাল থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করছে। তাদের টার্গেট ২০১৫ সালের মধ্যে ঢাকা শহরে দক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবেন। এ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে অনেক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। অনেক টাকা ব্যয়ে দুটি ল্যান্ডফিল গড়েছেন। দিয়েছেন পরিবেশবান্ধব বর্জ্য পরিবহন গাড়ি। ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা মনে করেন জাপানের সহযোগিতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ২০১৫ সালের মধ্যে একধাপ এগিয়ে যাবে দক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়।
Source: http://valokhabor.com
No comments:
Post a Comment