Saturday, October 26, 2013

আপনি কি এখন বুঝতে পারছেন আপনার মা কতটা কষ্ট করে আপনাকে জন্ম দিয়েছেন? মাতা-পিতার সেবা সর্বোত্তম সৃষ্টির সেবা

মাতা-পিতার সেবা সর্বোত্তম সৃষ্টির সেবা। মাতা-পিতার সেবা সম্পর্কে আলোচনা ও ভিডিও দেয়া হল: 

মাতা-পিতার সেবা ইবাদতেরই অংশ


আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : আর তোমার প্রতিপালক এ আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাকে ভিন্ন অপর কারও ইবাদত করো না। পিতা-মাতার প্রতি উত্তম আচরণ করো। যদি তাঁদের একজন কিংবা উভয়ে তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের উদ্দেশ্যে কখনও উহ্ পর্যন্ত করবে না। তাদেরকে ধমক দিয়ো না বরং তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও মার্জিত কথা বলো। আর তাদের উদ্দেশ্যে অনুগ্রহে বিনয়ের বাহু অবনমিত করো। আর বলো হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়কে অনুগ্রহ করো। যেমন তারা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছেন। (সূরা বনী-ইসরাইল-২৩/২৪) আল্লাহর অধিকারের পরই কুরআন ও হাদীসের ভাষ্যনুযায়ী মাতা-পিতার অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। কুরআনুল কারীমে যেখানে  আল্লাহর ইবাদতের কথা উল্লেখ রয়েছে, প্রায় সব জায়গায়ই সঙ্গে সঙ্গে পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
mathar 300x205 মাতা পিতার সেবা ইবাদতেরই অংশ
মাতা-পিতার অধিকার হচ্ছে : আমরা তাদের ভালোবাসবো, তাদের অনুগত হয়ে চলবো, আর সাধ্যানুযায়ী আমরা তাদের সাহায্য সহানুভূতি দেখাবো, বিশেষত তারা যখন বয়ঃবৃদ্ধ হন তখন তাদের সর্বোতকৃষ্ট সেবা করবো। মানুষের প্রকৃতিই এমন যে, যখন মানুষ বৃদ্ধ হয়, তখন সাধারণত কর্কশ মেজাজের হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় তারা বিভিন্ন প্রকারের শিশুসুলভ আচরণও করে থাকেন, এমনকি এমন কিছু আবদার করে যা অনাকাঙ্খিত। তাদের এসব আচার-আচরণ দেখে কিছুটা রাগ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু না, তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র রাগ করা যাবে না। তখন মনে করতে হবে সেই সময়ের কথা। যখন আমরা ছোট ছিলাম, আর আমাদের আব্বা-আম্মা আমাদের নানা প্রকারের খারাপ আচরণে কোনও প্রকারের রাগ করতেন না। এমনকি বিভিন্ন প্রকারের অহেতুক আবদারেও তারা বিন্দুমাত্র রাগ করতেন না বরং নিজের সর্বপ্রকার প্রচেষ্টার মাধ্যমে তা পূরণ করার জন্য সচেষ্ট হতেন। যেমনটি আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন কুরআনুল কারীমের মাধ্যমে আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।
পিতা-মাতারকে বার্ধক্যে করুণ অবস্থায় পাওয়া যে কোনও সন্তানের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আর এই সৌভাগ্যকে যারা কাজে লাগাতে পারল না তাদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য। কেননা, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত নবী করীম (সা.) বলেছেন: তার নাক ধুলায় মলিন হোক, তার নাক ধুলায় মলিন হোক, তার নাক ধুলায় মলিন হোক। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই হতভাগ্য ব্যক্তিটি কে? রাসূল (সা.) জবাব দিলেন: সে হলো সেই ব্যক্তি যে তার বাবা-মা উভয়কে অথবা কোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। (মুসলিম)
এ ছাড়াও বাবা-মার মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহর হাবীব আরও বলেন: আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সন্তানের ওপর বাবা-মার কি হক আছে? তিনি বললেন, তারা তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম। (ইবনে মাজা)
এছাড়া আল্লামা ইউসূফ ইসলাহী তার বাবা-মা ও সন্তানের অধিকার গ্রন্থে মাতা-পিতার ১১টি অধিকার বর্ণনা করেছেন :
১. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা,
২. সর্বদা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা,
৩. তাদের আবেগের প্রতি দৃষ্টি রাখা,
৪. যথাযথ খেদমত করা,
৫. সুন্দর আচরণ করা,
৬. সর্বদা আদব ও সম্মান প্রদর্শন করা,
৭. তাদের মান্য করা,
৮. দোয়া করা ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা,
৯. মহব্বত প্রদর্শন করা,
১০. আর্থিক সহায়তা প্রদান করা এবং
১১. সর্বদা তাদের নাফরমানী হতে দূরে থাকা।
পিতা-মাতার অধিকার বা হক শুধু জীবদ্দশায়ই শেষ হয়ে যায় না বরং তাদের হক শাশ্বত বা চিরঞ্জীব অর্থাৎ, অনন্তকাল ধরে রয়েই যায়। একটি পর্যায়ে একটু কাজ করেই শেষ হয়ে যাবে ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়, বরং মৃত্যুর পরেও তাদের প্রতি আমাদের অনেক কর্তব্য রয়েছে।
আর তা হচ্ছে:
১. তাদের জন্য দোয়া ও ইসতিগফার করা,
২. তাদের অসিয়ত পূরণ করা,
৩. পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সদাচরণ করা এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং
৪. তাদের দিকের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। এ সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেছেন: হযরত আবু উসাইদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে বসা ছিলাম। হঠাত বনী সালমা গোত্রের এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর নবী! পিতা-মাতা ইন্তেকালের পরেও কি তাদের হক আমার উপরে আছে, যা পূরণ করতে হবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ আছে। তাদের জন্য দোয়া ইস্তেগফার করবে, তাদের কোনো অসিয়ত থাকলে তা পূরণ করবে, পিতৃ ও মাতৃকুলের আত্মীয়দের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করবে (আবু দাউদ) আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের তাওফীক দান করুন। আমীন!

ক্ষেত্র বিশেষে মাতা-পিতার সেবা করা জিহাদের চেয়ে উত্তম
- বি. এম. শওকত আলী

ক্ষেত্র বিশেষে মাতা-পিতার সেবা করা জিহাদের চেয়ে উত্তম। মুআবিয়া ইবন জাহিমা আস সুলামি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পরকালীন নাজাত লাভের উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বললেন, আফসোস তোমার জন্য! তোমার মা কি বেঁচে আছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ বেঁচে আছেন। তিনি বললেন, যাও তার খেদমতে আত্মনিয়োগ করো। এরপর আমি অন্যদিক থেকে এসে আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তির আশায় আপনার সঙ্গে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বললেন, আফসোস তোমার জন্য! তোমার মা কি বেঁচে নেই? আমি বললাম, হ্যাঁ, বেঁচে আছেন। তিনি বললেন, যাও তাঁর সেবা করো। অতঃপর আমি তাঁর সামনের দিক দিয়ে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সফলতা লাভের আশায় আপনার সঙ্গে জিহাদে শামিল হতে চাই। তিনি বললেন, তোমার মা কি বেঁচে আছেন? হ্যাঁ বেঁচে আছেন। তিনি বললেন, যাও তাঁর সেবা করো। অতঃপর আমি তাঁর সামনের দিক দিয়ে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফলতা লাভের আশায় আপনার সঙ্গে জিহাদে শামিল হতে চাই। তিনি বললেন, আফসোস তোমার জন্য! তোমার মা কি বেঁচে নেই? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহের! আমার মা বেঁচে আছেন। তিনি আমাকে বললেন, আফসোস তোমার জন্য তুমি তোমার মায়ের চরণ অাঁকড়ে ধর। সেখানেই রয়েছে জান্নাত।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি ইয়ামেন থেকে হিজরত করে রাসুলুল্লাহের (সা.) এর দরবারে এসেছে। রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি শিরক পরিত্যাগ করে এসেছ। তবে তোমার জিহাদ বাকি রয়ে গেছে। ইয়ামেনে কি তোমার মাতা-পিতা নেই? লোকটি বলল, হ্যাঁ আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাঁরা কি তোমাকে জিহাদে আসার অনুমতি দিয়েছে? জবাবে লোকটি বলল, না অনুমতি দেয়নি। রাসুলুল্লাহের (সা.) তাকে বললেন, তোমার মাতা-পিতার কাছে যাও, তাঁরা অনুমতি দিলে জিহাদের জন্য এসো। অন্যথায় তাঁদের সেবা-যত্ন কর।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলের (সা.) দরবারে এসে আরজ করল, (ইয়া রাসুলুল্লাহের )! আমার জিহাদে যাওয়ার খুব ইচ্ছা, অথচ আমার সেই সামর্থ্য নেই। রাসুল (সা.) বললেন, তোমার মাতা-পিতা কেউ বেঁচে আছেন কি? লোকটি বলল, আমার মা বেঁচে আছেন? তিনি বললেন, যাও তোমার মায়ের সেবায় নিয়োজিত থেকে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ কর। এটা যদি তুমি করতে পার, তাহলে তুমি হজ ও উমরা এবং আল্লাহর পথে জিহাদকারী হিসেবে পরিগণিত হবে।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহের (সা.) দরবারে এসে আরজ করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন নাজাত লাভের উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে জিহাদ করার জন্য এসেছি। আমাকে আসতে দেখে আমার মাতা-পিতা দুজনই কাঁদছিলেন। একথা শুনে তিনি লোকটিকে বললেন, তুমি তাঁদের কাছে ফিরে যাও এবং তাঁদের মুখে হাসি ফোটাও, যেমনিভাবে তুমি তাঁদের কাঁদিয়েছিলেন।
আল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল, আমি আল্লাহর নিকট থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশায় আপনার নিকট হিজরত ও জিহাদের বাইয়াত করছি। তিনি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মাতা-পিতার মধ্যে কেউ কি জীবিত আছেন? লোকটি উত্তরে বলল, তাঁরা উভয়ে জীবিত আছেন। তিনি লোকটিকে বললেন, তুমি কি বাস্তবিকই আল্লাহর নিকট থেকে হিজরত ও জিহাদের প্রতিদান পেতে চাও? লোকটি জবাবে বলল, হ্যাঁ, পেতে চাই। রাসুলুল্লাহের এরশাদ করলেন, তুমি তোমার মাতা-পিতার কাছে ফিরে যাও, তাঁদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে থাক।
মুয়াবিয়া ইবন জাইমা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন আমার পিতা জাহিমা (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহের ! আমি জিহাদে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা করেছি। এ ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে পরামর্শ করতে এসেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ, আছেন। তিনি বললেন, যাও, মায়ের খেদমতে আত্মনিয়োগ কর। কেননা জান্নাত তাঁর পায়ের কাছে।

মাতা-পিতার অধিকার:


পিতা-মাতার নাফরমানী:

Tuesday, October 22, 2013

চা বিক্রি করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন...



-গাজীউল হক, কুমিল্লা | তারিখ: ২৫-০৮-২০১২

বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন! হাঁটেন লাঠিতে ভর দিয়ে। বিদ্যালয়ের বারান্দা ধরে এগোচ্ছেন। বাঁ হাতে চায়ের পেয়ালা। চকিতে নজর বুলিয়ে ঢুকে পড়েন একটি শ্রেণীকক্ষে। তাঁকে দেখে শিক্ষক খানিকটা অপ্রস্তুত; চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান তিনি। ইতস্তত করে বলেন, ‘আপনি আবার কষ্ট করে...।’ জবাবে মানুষটি স্মিত হাসেন। টেবিলের ওপর পেয়ালা নামিয়ে রাখতে রাখতে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করেন, ‘পড়াশোনা কেমন হচ্ছে?’ ছেলেমেয়েরা সমস্বরে বলে, ‘ভালো হচ্ছে দাদু।’ ঠোঁটের ওপর ঝুলে থাকা হাসিটা এবার ছড়িয়ে পড়ে সারা মুখে। হূষ্টচিত্তে শ্রেণীকক্ষ থেকে বের হন।
বয়স তাঁর ৮২। পেশায় দোকানদার, চা বেচে দিন চলে। আরও একটি পরিচয় আছে তাঁর। তিনি এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। নাম আবদুল খালেক। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার নলুয়া চাঁদপুর গ্রামে বাড়ি। সেই গ্রামেই বছর ১৫ আগে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। নাম দেন নলুয়া চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা তাঁকে দাদু বলে ডাকে। অনেকের কাছে এটি ‘দাদুর স্কুল’ নামে পরিচিত।
মনঃপীড়া থেকে স্কুল প্রতিষ্ঠা: কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক লাগোয়া নলুয়া চাঁদপুর গ্রাম। ১৯৩০ সালে সেই গ্রামে আবদুল খালেকের জন্ম। ১৯৪২ সালে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার বিজয়পুর উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে পড়াটা আর এগোয়নি। মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে নানা জিনিস বেচতেন। একসময় চা বিক্রি শুরু করেন আবদুল খালেক। সেই পাকিস্তান আমলের কথা। মহাসড়কের পাশে একটি দোকানঘর তোলেন। সেই দোকানে চা খেতে ভিড় জমাত অনেকে। নিম্নমাধ্যমিকের গণ্ডি পার না হলেও আবদুল খালেক কথা বলেন শুদ্ধ উচ্চারণে। এ নিয়ে গ্রামের অনেকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করত। শিক্ষিত তরুণদের নাম বিকৃত করে ডাকত তারা। বিষয়টি তাঁকে মনঃপীড়া দিত ভীষণ। তিনি ভাবতেন, শিক্ষিত না হলে গ্রামের মানুষজন সভ্যভব্য হবে না। কিন্তু এলাকায় তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নেই। ছেলেমেয়েরা পড়বে কোথায়! সেই থেকে একটি বিদ্যালয় গড়ার স্বপ্ন তাঁর মনে।
আবদুল খালেকের সেই স্বপ্ন বাস্তবে এসে ধরা দেয় বহু বছর পর। মুক্তিযুদ্ধের আগে সড়কের পাশে ৫২ শতাংশ জমি সাত হাজার টাকায় কিনেছিলেন। চা বেচার টাকাতেই কিনেছিলেন জমিটুকু। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে নিজের শেষ সম্বল সেই জমিটুকুই বিদ্যালয়কে দান করে দেন।
আবদুল খালেক বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেখলাম এলাকায় শিক্ষিতের হার বাড়ছে না। বহু লোক নিরক্ষর। যাঁরা শিক্ষিত তাঁদের সম্মান নেই। ওই ভাবনা থেকেই মনে করলাম, এমন কাজ করতে হবে—যাতে মরলেও মানুষ স্মরণ করে।’
তাঁকে দেখে এগিয়ে এলেন অনেকে: গ্রামের অনেকেই তাঁর স্বপ্নের কথা জানতেন। একটি বিদ্যালয় করার তাগিদ গ্রামের সচেতন মানুষজনও অনুভব করতেন। কিন্তু সে জন্য অনেক জমির প্রয়োজন। সে জমি কেনার টাকা মিলবে কোত্থেকে! এ প্রশ্নেই আটকে ছিল বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। সে উদ্যোগের পালে হাওয়া দিতে এগিয়ে এলেন আবদুল খালেক। দান করলেন সড়কের পাশের জমিটুকু। তাঁর মহানুভবতা দেখে এগিয়ে এলেন আরও অনেকে। কেউ টিন দেন, কেউ বাঁশ-কাঠ, কেউ বা দেন টাকা। গ্রামের মানুষের সহায়তায় দেখতে দেখতে দাঁড়িয়ে যায় প্রায় ৬০ ফুট টিনের ঘরটি। সাইনবোর্ডে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে লেখা হয় আবদুল খালেকের নাম।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মো. সফিউল্লাহ বলেন, ‘এখন স্কুলে সাড়ে ৮৬ শতক জমি আছে। এর মধ্যে আবদুল খালেক ৫২ শতক দিয়েছেন। বাকি সাড়ে ৩৪ শতক এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে কিনেছেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হলে কমপক্ষে ৭৫ শতক জমির প্রয়োজন। তাই আবদুল খালেকের উদ্যোগকে টেনে নিয়ে গেছেন গ্রামবাসী।’ এলাকাবাসী জানায়, তারা সহযোগিতা করেছে ঠিকই। কিন্তু বাতি জ্বালিয়েছেন আবদুল খালেকই।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রথম সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘তিনি যে ওই জায়গা বিদ্যালয়ের নামে লিখে দেবেন, ভাবতেই পারিনি। আমাকে জায়গাটি দেখিয়ে একদিন বলেছিলেন, “এখানে হাইস্কুল হবে। আপনি হবেন এর প্রথম সভাপতি।” এত বড় ত্যাগ আমাদের সমাজে এ পর্যায়ের মানুষের মধ্যে খুব একটা দেখা যায় না।’
পেলেন স্কুল, হারালেন অর্ধাঙ্গিনী: সকিনা আক্তার ও আবদুল খালেক দম্পতির ঘরে ছেলেমেয়ে ছিল না। শুরুতে জমিদানের কথা শুনে স্ত্রী আবদুল খালেককে ‘পাগল’ ঠাওরেছিলেন। ১৯৯৯ সালের ৫ অক্টোবর বিদ্যালয় দেখতে যান সকিনা। বাড়ি ফেরার পথে বিদ্যালয়ের সামনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। সেদিন জিপ গাড়িটি চাঁদপুরের দিকে যাচ্ছিল। সকিনার শাড়ির আঁচল গাড়ির পেছনে আটকে যায়। গাড়িটি তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় শাহরাস্তির নাওড়া-বানিয়াচং এলাকা পর্যন্ত। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর থেকে আবদুল খালেক একাই আছেন। বিদ্যালয়ের পাশেই তাঁর চায়ের দোকান। দোকানে থাকেন সারা দিন, রাতে সেখানেই ঘুম। কিছু বিস্কুট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখেন দোকানে। এগুলো বেচে দিনে শ তিনেক টাকা পান। তা দিয়েই চলে যায় তাঁর।
বিদ্যালয়ের ঠিকুজি: ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি ৭০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে নলুয়া চাঁদপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এমপিওভুক্ত হয় ২০০৪ সালে। বর্তমানে এখানে পাঁচজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক আছেন। আছেন খণ্ডকালীন আরও পাঁচজন শিক্ষক। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী আছে ২০৫ জন। এ বছর থেকে নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষা কার্যক্রম চালুর মধ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি উচ্চবিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে।
বিদ্যালয়টি থেকে ২০১০ সালে ৩৮ জন শিক্ষার্থী জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে শতভাগ। গত বছর ৪২ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ৩৯ জন। সহশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিদ্যালয়ে নিয়মিত সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
আবদুল খালেক বলেন, ‘নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকা অবস্থায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা যখন বিদায় নিত, তখন হাউমাউ করে কাঁদতাম। এখন উচ্চবিদ্যালয় হওয়ায় বেশ ভালো লাগছে।’
দরদি মানুষটির আক্ষেপ: কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তরে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। টিনের লম্বা ঘরটিতে চারটি শ্রেণীকক্ষ। এ ঘরের পশ্চিমে আছে তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি আধপাকা ভবন। এর একটিতে শিক্ষকেরা বসেন, বাকি দুটি শ্রেণীকক্ষ। কিন্তু কোনো কক্ষেই বৈদ্যুতিক পাখা নেই।
‘বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎই নেই, পাখা দিয়ে কী হবে! প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীরা হাঁসফাঁস করে। মাত্র দুটি খুঁটি বসালেই বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। অথচ এ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।’ আক্ষেপ ঝরে আবদুল খালেকের কণ্ঠে। তিনি বিদ্যালয়ে দলাদলি পছন্দ করেন না। তাঁর স্বপ্নের বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে রাজনীতি রয়েছে।
যা-ই ঘটুক, রোজ দুবার বিদ্যালয়ে যান, সবার খোঁজখবর নেন। নিজে চা বানিয়ে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের বিনা পয়সায় চা খাওয়ান। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের চা খাওয়ানোর ওই দৃশ্য দেখা যায়। অবশ্য এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। আগের মতো রোজ চা-বিস্কুট নিয়ে যেতে পারেন না। আবদুল খালেকের কথায়, ‘চা পানে ক্লান্তি দূর হয়, পাঠদানেও আগ্রহের সৃষ্টি হয়। শিক্ষকদের সতেজ রাখার জন্য চা খাওয়াই।’
সবাই যা বলেন: বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রহিমা আক্তার ও মাহফুজুর রহমান বলে, দাদু লাঠিতে ভর দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসেন। আমাদের ক্লাস নিয়মিত হয় কি না জিজ্ঞেস করেন। 
নলুয়া চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সফিউল্যাহ বলেন, ‘এখনো আবদুল খালেক দুই বেলা বিদ্যালয়ে এসে আমাদের কার্যক্রম তদারক করেন। শিক্ষার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ আমাদের উজ্জ্বীবিত করে।’
বিদ্যালয় এলাকার ইউপি সদস্য ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুর রশিদ বলেন, ‘তিনি আমাদের এলাকার দানবীর। রাস্তার পাশের দামি জমিটাই তিনি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেছেন।’
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কবির উদ্দীন বলেন, ‘আবদুল খালেকের এমন উদ্যোগ সমাজ ও রাষ্ট্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। চা বিক্রি করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা ত্যাগী মানুষের পক্ষেই সম্ভব। তিনি ওই এলাকার বাতিঘর।’
আবদুল খালেক চা বানান, আর শিক্ষার্থীদের হই-হুল্লোড় দেখেন। এসব দেখে তাঁর প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফলাফল দেখে চোখ বুজতে চান সাদা মনের এই মানুষটি।




Thursday, October 17, 2013

একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ ।। ঈদগাঁওয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাজারের আবর্জনা অপসারণ

একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ ।। ঈদগাঁওয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাজারের আবর্জনা অপসারণ

কক্সবাজার সদরের জনগুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ঈদগাঁও বাজারের প্রধান সড়ক অলিগলিতে স্তুপিকৃত দীর্ঘদিনের ময়লা আবর্জনা,কাদামাটি স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে অপসারণ করেছে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ইউছুপেরখীল ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে অর্ধদিন ব্যাপী পরিচালিত উক্ত পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সংস্থার ৩৫জন সদস্য ৭জন দিন মজুর ২টি ভ্যানগাড়ি ৩টি ঠেলাসহযোগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টা ৩০মিনিট থেকে বাজারের উত্তর প্রান্তের শহীদ জয়নাল সড়ক থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক হয়ে দক্ষিণ প্রান্তে দারুল ফাতাহ একাডেমীর গেইট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার ব্যাপী অংশে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করে।
দুপুর ১টা পর্যন্ত স্থায়ী উক্ত কর্মসূচিতে নিয়োজিত সদস্য শ্রমিকদেরকে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন শ্রমিকনেতা সেলিম আকবর। উল্লেখ্য, দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক এলাকা ঈদগাঁও বাজার থেকে প্রতিবছর অর্ধকোটি টাকার রাজস্ব আয় হলেও বাজারের উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই।
অবশেষে ভুক্তভোগীরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে দেখিয়ে দিলেন আমরা পারি


Wednesday, October 16, 2013

বাগেরহাটে স্বেচ্ছাশ্রমে ২০টি খালের কচুরিপানা পরিষ্কার

বাগেরহাটে স্বেচ্ছাশ্রমে ২০টি খালের কচুরিপানা পরিষ্কার

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন খাল, বিল জলাশয়ে দীর্ঘদিনের জমে থাকা কচুরিপানা স্বেচ্ছাশ্রমে পরিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত উপজেলার ১০ সহস্রাধিক বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষ পরিষ্কার কাজে অংশ নেন।
জানা গেছে, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের চারটি খালের ১২ কিলোমিটার, ধানসাগর ইউনিয়নের তিনটি খালের ছয় কিলোমিটার, সাউথখালী ইউনিয়নের তিনটি খালের চার কিলোমিটার এবং রায়েন্দা ইউনিয়নের ১০টি খালের সাত কিলোমিটার এলাকার কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়। ছাড়া বিল জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে।
স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেয়া উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের জলিল হাওলাদার, শহিদুল ফরাজী, ফাতেমা বেগম এবং মঞ্জু রানী বলেন, বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা কচুরিপানার কারণে পানিসংকট, মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। কচুরিপানা জমে থাকার কারণে জমি চাষের সময় খাল থেকে পানি তুলতে অসুবিধা হতো ছাড়া পথে কোনো নৌকাও চলাচল করতে পারত না। এসব সমস্যা দূর হবে আশায় প্রশাসনের আহ্বানে আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে অংশ নিয়েছি।
কদমতলা গ্রামের মনোয়ারা বেগমইদ্রিস তালুকদার, মো. আফজাল হাওলাদার, ইয়াকুব আলী তালুকদার বলেন, খালের কচুরিপানা তুলে ফেলায় এখন কৃষিকাজসহজে পানি পাওয়া যাবে এবং ডিঙ্গি নৌকা চালিয়ে মাঠের জমিতে যাওয়া যাবে। স্বেচ্ছাশ্রমে ধরনের জনহিতকর কাজ করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত।
খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান মতিয়ার রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কাজ করা হয়। ধরনের উদ্যোগে এলাকার সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।
কর্মসূচির সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার হোসেন বলেন, সরকারিভাবে কাজ করতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা প্রয়োজন হতো। টাকা ছাড়াই এলাকাবাসীর ইচ্ছায় স্বেচ্ছাশ্রমে তা করা সম্ভব হয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম মামুন উজ্জামান বলেন, উপজেলার ২০টি খালের ১৯ কিলোমিটার এলাকার কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়। প্রায় ১০ সহস্রাধিক লোক কাজে অংশ নেন। এলাকার খাল-বিল জলাশয়ে অন্তত ২০ বছরের জমে থাকা কচুরিপানা পরিষ্কার করার ফলে এলাকাবাসীর পানির সংকট দূর হবে এবং বন্ধ থাকা অভ্যন্তরীণ নৌপথ চালু হবে। প্রশাসনের আহ্বানে উপজেলার শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কৃষক, জেলে, গ্রাম পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, ভিজিডি-ভিজিএফ কার্ডধারী সব শ্রেণীর সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে অংশ নেয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় ব্যান্ড বাজিয়ে কাজে অংশ নেয়া মানুষকে উত্সাহ দেয়। খাল-বিল জলাশয় থেকে তোলা কচুরিপানা দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার চিন্তাও প্রশাসনের রয়েছে।


Monday, October 14, 2013

খেদমতে খালক : আল্লাহকে পাওয়ার সহজ পথ

খেদমতে খালক : আল্লাহকে পাওয়ার সহজ পথ

মামুন মল্লিক

খেদমত একটি সহজ ইবাদত। প্রবাদ আছে—‘খেদমতে খোদা মিলে’। কথাটি ভোরের সূর্যের মতোই সত্য। প্রত্যেক মানুষ তার নিজস্ব কর্মক্ষেত্র থেকে তা করতে পারে। যে কোনো বয়সে যে কোনো ব্য³রি খেদমত করা যায়। আল্লাহতায়ালা খেদমতকারী ব্য³রি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। পরকালে তার জন্য রেখে দিয়েছেন জান্নাত। ইহকালেও মর্যাদার অন্ত নেই। আমাদের কাছে মাখদুমের কদর বেশি হলেও আল্লাহতায়ালার কাছে খাদেমের মূল্য বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) খেদমত সম্পর্কে বলেন, ‘যে ব্য³ িদুনিয়াতে কারও দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন, আল্লাহতায়ালা পরকালে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন।’ খেদমতের ক্ষেত্রও অনেক। ধর্ম, জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্যই খেদমত মহাপুণ্যের কাজ। মূলত এটিই হলো আল্লাহতায়ালাকে পাওয়ার সহজ উপায়। 

পিতামাতা, গুরুজন ও আত্মীয়-স্বজনের খেদমত ছাড়াও কোনো পথিকের বোঝা উঠিয়ে দেয়া, বৃদ্ধ-দুর্বলকে সাহায্য করা, তার বোঝা বহন করা বা কোনো দুর্বল ব্য³ িট্রাফিক জ্যামে সড়ক পার হতে অক্ষম হলে তাকে সড়ক পার করে দেয়া, যদি কেউ বাসের অপেক্ষা করে অথবা ভিড়ের কারণে ধাক্কাধাক্কি ও চাপের মুখে পড়ে যায় তাহলে তাকে বাসে উঠিয়ে দিতে সাহায্য করা। যদি কোনো দুর্বল-বৃদ্ধলোক অথবা মহিলা বাসে উঠে সিট না পায়, তাহলে নিজের সিট ছেড়ে দিয়ে তাদের বসতে দেয়া। এমনিভাবে কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করানো, কোনো অজ্ঞাত-অপরিচিত ব্য³কে পথের সন্ধান দেয়া, কলহে লিপ্ত দু’ব্য³রি মাঝে সন্ধি স্থাপন করে দেয়া—এসবই খেদমতে খলকের অন্তর্ভু³।
মানুষকে গোনাহ থেকে বাঁচানোও একটি খেদমত। এতে একজন মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতের নিয়ামতরাজি ভোগের সুযোগ করে দেয়া হয়, এর চেয়ে বড় খেদমত আর কি হতে পারে। এতদসত্ত্বেও যদি কেউ গোনাহ করতে থাকে, তাহলে তার ওপর জোরজরবদস্তি করা বা করজোরে তা থেকে পিছিয়ে যাওয়া কোনোটিই ঠিক নয়। কেননা অতিরি³ খোশামোদ ক্ষতি ও ঝগড়া-বিবাদের কারণ হতে পারে।
হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) স্বীয় ওস্তাদ হজরত শায়খুল হিন্দের (রহ.) এ ঘটনা বর্ণনা করেন, জনৈক ভদ্রলোক লক্ষেষ্টৗ থেকে হজরত শায়খুল হিন্দের (রহ.) খেদমতে উপস্থিত হলো। আর ওই ভদ্রলোকটি হলো একজন হিন্দু বেনিয়া। সে হিন্দু এবং তার সঙ্গে আগের কোনো সম্পর্কও ছিল না। এতদসত্ত্বেও বেনিয়াকে তার গৃহে আশ্রয় দিলেন এবং মেহমানদারী করলেন।
রাতে বারান্দায় একটি খাটে থাকার ব্যবস্থা করলেন। প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তাহাজ্জুদের সময় যখন ঘুম ভাঙল তখন এক অভিনব দৃশ্য দৃষ্টিগোচর করি। তাহলো হিন্দু ব্য³টি শুয়ে আছে আর হজরত শায়খুল হিন্দ (রহ.) তার পা দাবিয়ে দিচ্ছেন। ভদ্রলোক উঠে যেতে চাইলেও তিনি তাকে উঠতে দিচ্ছেন না। তবুও অন্যরকম এক অস্থিরতায় শেষ পর্যন্ত উঠেই পড়ল। মেহমানদের অন্য একজন এসে তাকে বললেন, হজরত আপনি এ কি করছেন! হজরত (রহ.) বললেন, সে আমার মেহমান। তার খেদমতের দায়িত্ব আমারই। দেখুন! একজন হিন্দু কাফেরের সঙ্গেও তাঁর আচরণ কেমন ছিল।
খেদমতে খালকের মাঝে কোনো বাদানুবাদ ও বিভাজন নেই। শুধু মানবতা ও মনুষ্যত্বের ভিত্তিতেই খেদমত করা উচিত। ইসলামে কাফেরদের অনুসরণ করা নিষেধ। তাদের ভ্রান্ত কাজে সম্পৃ³তাও নিষেধ। কিন্তু যেসব কাফেরের সঙ্গে মুসলমানদের নিয়মতান্ত্রিক যুদ্ধ নেই, তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে নিষেধ নেই। বরং তা সওয়াবের কাজ। এতে আল্লাহতায়ালাও খুশি হন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্য³ িদুনিয়াতে কোনো মুমিনের কাজকর্ম সহজ করে দেয়, আল্লাহতায়ালা ইহকালে ও পরকালে তার যাবতীয় বিষয়াদি সহজ করে দেবেন।’ তিনি দুনিয়াতে মানুষের সহায় হওয়ার কারণেই এ পুরস্কার লাভ করবেন।
প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক ব্য³ত্বি ডা. আবদুল হাই আরেফী (রহ.) বিভিন্ন সময় একথা বলতেন যে, আমি তোমাদের একটি বড় সাফল্যের কথা বলব, যা তোমাদের অনেকেরই জানা নেই। এটা এমন এক সাফল্য বা মর্যাদা, যা অর্জনে তোমাদের কেউ হিংসায় জ্বলে উঠবে না। আর ফজিলত—তা মানুষকে সোজা জান্নাতে নিয়ে যায়। সেই সাফল্য বা মর্যাদাটি হলো তুমি কারও খাদেম হয়ে যাও। এ মর্যাদার জন্য কেউ তোমার সঙ্গে ঝগড়া করতে আসবে না। কেউ কেড়ে নিতে চাইবে না যে, এটি আমাকে দিয়ে দাও। কেউ প্রতিহিংসায় জ্বলে উঠবে না। কেউ শত্রুতে পরিণত হবে না। কেননা এগুলো ‘মাখদুম’ বা খেদমত গ্রহণ করার কারণে হয়ে থাকে। খাদেম হওয়াতে ঝগড়ার কোনো অবকাশ নেই। তাহলে দেখবে কেউ তোমার মোকাবিলায় অবতীর্ণ হবে না। বরং তুমি সফলতার স্বর্ণশিখরে পৌঁছে যাবে।
সর্বোপরি এটি একটি ইবাদত। এর নগদ একটি ফায়দা এই, যে ব্য³ িখেদমত করবে হিংসা-বিদ্বেষ ও অহঙ্কার তার কাছেও ঘেঁষতে পারবে না। যদি কখনও অহঙ্কার এসে যায়, তখন সামান্য খেদমতের দ্বারাই তা দূর হয়ে যাবে। সুতরাং খেদমতে খালক অহঙ্কার দমনের এক মহৌষধ।
প্রত্যেকেরই নিজস্ব অবস্থানে থেকে খেদমতের জন্য লেগে যাওয়া জরুরি। আইনজীবীদের উচিত, আইন মারফত মাজলুমদের সাহায্য করা। তাদের মামলা-মোকদ্দমায় বিনা পারিশ্রমিকে সহায়তা করা। ডা³ারদের উচিত, প্রাথমিক ওষুধপত্রের মাধ্যমে সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। ফ্রি চিকিত্সার ব্যবস্থা করা এবং অতিরি³ ফি না নেয়া। এরকম প্রতিটি অঙ্গনের মানুষেরই নিজ নিজ পরিসরে খেদমতের সুযোগ কাজে লাগানো উচিত।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে অন্যের সেবায় কিছু করার তাওফিক দান করুন।


জিডিপিতে স্বেচ্ছাশ্রম সেবার অবদান ১.৭ শতাংশ

জিডিপিতে স্বেচ্ছাশ্রম সেবার অবদান ১.৭ শতাংশ


স্বেচ্ছাশ্রম সেবার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বাংলাদেশে নেই। তারপরও বছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১ দশমিক ৭ ভাগ অবদান রাখছে এই সেবা। টাকায় যার মূল্য ১১ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা।

সোমবার বিকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে স্বেচ্ছাশ্রম জরিপ বিষয়ক এক কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যার ব্যুরো ও ইউএনডিপির ইউএনভি প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে ২০১০ সালের এপ্রিলে এই জরিপ পরিচালনা করে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার। তিনি বলেন, ‘স্বেচ্ছাশ্রম সেবার জন্য বাংলাদেশে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই। তারপরও বাংলাদেশের সংস্কৃতি এমন যে একে অন্যের সাহায্যে সবসময় এগিয়ে আসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারও দারিদ্র দূর করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রাম (এনএসপি)।’

ন্যাশানাল সার্ভিস পলিসি দ্রুত কার্যকর করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল এজেন্সি থাকলে এই ধরনের স্বেচ্ছাশ্রম ও সেবামূলক কার্যক্রম আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতো। এজন্য সরকার দ্রুত ন্যাশানাল সার্ভিস পলিসিকে কার্যকরি করার উদ্যোগ নিচ্ছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার বলেন, ‘যুবকদের কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। যেসব স্বেচ্ছাসেবী এই ধরনের কাজে আগ্রহী তাদের প্রশিক্ষণ দিতে আমরা প্রস্তুত। দ্রুতই প্রশিক্ষণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

জরিপের ফলাফল বলা হয়, দেশের ১৫ বছরের উর্ধ্বে ৯ কোটি ৪৫ লাখ ১৯ হাজারের মধ্যে শতকরা ১৭ দশমিক ৫৫ জন অর্থাৎ ১ কোটি ৬৫ লাক্ষ ৮৬ হাজার এই ধরনের স্বেচ্ছাশ্রমে যুক্ত। এদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে থাকে ১৬ লাখ ৯ হাজার জন, অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেবা দিয়ে থাকে ১ কোটি ৪৭ লাক্ষ ২৯ হাজার জন আর উভয়ভাবে সেবা দেয় ২ লাখ ৪৯ হাজার জন।

এই ধরনের কাজে ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী লোকদের বেশি যুক্ত হতে দেখা যায়, যার পরিমাণ শতকরা ৩১ দশমিক ৩৬ ভাগ। এরপর ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী লোক যার পরিমাণ শতকরা ২১ দশমিক ৫২ ভাগ।

সবচেয়ে বেশি স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া হয় ধর্মীয় কাজে, যার পরিমাণ শতকরা ২৮ দশমিক ৬০ ভাগ। এছাড়া সামাজিক কার্যক্রমে (কমিউনিটি সার্ভিস) ২৪ দশমিক ৫৪ ভাগ, স্বাস্থ্যসেবায় সহায়তা ২১ দশমিক ৬০ ভাগ, শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা ১৫ দশমিক ৭১ ভাগ, ব্যক্তিগত ও সামাজিক খাতে সহায়তা ১১ দশমিক শূন্য ৪ ভাগ ও অন্যান্য খাতে স্বেচ্ছাশ্রম সহায়তা ১৬ দশমিক ৫১ ভাগ।

স্বেচ্ছাশ্রম কাজে সবচেয়ে বেশি যুক্ত ঢাকা বিভাগের অধিবাসীরা (৩৫ শতাংশ) ও সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগের অধিবাসীরা (৫ শতাংশ)। এছাড়া চট্টগ্রামে ২১ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ শতাংশ, খুলনায় ১৪ শতাংশ ও বরিশালে ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সচিব রীতি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সচিব মাহবুব আহমেদ, ইউএন রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটর নীল ওয়াকার, ইউএনভির সাউথ এশিয়া ডেভিলপমেন্ট ডিভিশনের সিনিয়র পোর্টফোলিও ইব্রাহিম হুসাইন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শাজাহান মোল্লা প্রমুখ।

১৮ জুলাই ২০১১

Saturday, October 12, 2013

স্বেচ্ছাশ্রম: পরিচয় ও গুরুত্ব

স্বেচ্ছাশ্রম: পরিচয় ও গুরুত্ব
-ওসামা বিন নূর

আজ(০৫ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস। সেবার প্রতি ব্রত নিয়ে দিবসটির আগমন। সেবাই প্রকৃত ধর্ম। আর সেই সেবার মনমানসিকতা নিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে স্বাধীনভাবে নির্দিষ্ট সময়, কর্মশক্তি ও দক্ষতার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করাকে স্বেচ্ছাসেবা বলা হয়। স্বপ্রণোদিত হয়ে সামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজ এবং সম্ভাবনাময় উদ্যোগ গ্রহণ করে সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবা করা যায়। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে আজ গ্রাম-গ্রামান্তরে স্বেচ্ছাশ্রমের আগ্রহ বেড়েছে। দেশপ্রেমের মূলমন্ত্র থেকেই স্বেচ্ছাসেবার জন্ম।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জন হলো স্বেচ্ছাশ্রমের বড় উদাহরণ। দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন লাখো বাঙালি আর আমাদের দিয়ে গেছেন স্বাধীন ভাষা, স্বাধীন রাষ্ট্র। এ ছাড়া এ বছরের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে আটকে থাকা শ্রমিক উদ্ধারের ঘটনাও বড় বিষয়। আমাদের এ রকম নানা দুর্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের দৃষ্টান্ত আমরা দেখি। স্বেচ্ছাশ্রম একটি সমষ্টিগত কল্যাণ প্রচেষ্টা। আমাদের রয়েছে প্রচুর জনসম্পদ। এই জনসম্পদকে যদি স্বেচ্ছাসেবায় আগ্রহী করে তোলা যায়, তাহলে সবার পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে।
ব্যক্তি তার দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্নভাবে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করতে পারে। যার যার অবস্থান থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী সেটা যেমন সশরীরে হতে পারে, তেমনি ইন্টারনেটের যুগে ভার্চুয়ালিও হতে পারে। ছোট ছোট কাজ_ রাস্তার পাশে বৃক্ষ রোপণ করা যেমন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, তেমনি পরিবেশ রক্ষায় অন্যান্য কাজসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সুনামি, ভূমিকম্প, বন্যা, হারিকেন ইত্যাদি অবস্থায় জরুরিভাবে স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত করাও এর অন্তর্ভুক্ত।
স্বেচ্ছাসেবার নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হতে পারে, আবার কমিউনিটিতে নিজস্ব এলাকায় সব সমস্যা দূরীকরণে একটি স্বেচ্ছাকর্মী দল গঠন করে তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কমিউনিটি সমস্যার সমাধানে হতে পারে। যেমন, গ্রামের ভাঙা রাস্তা মেরামতে সবাই যৌথভাবে কাজ করে রাস্তা ঠিক করা বা এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকলে সবার সহযোগিতায় ডাস্টবিন স্থাপন ইত্যাদি।
উন্নয়নশীল দেশগুলো স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে তাদের নিজেদের, সমাজের ও দেশের উন্নয়ন করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে। কানাডায় ২০১০ সালে ১২ মিলিয়ন কানাডিয়ান বা ৪৫% জনগণ (১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব) দেশের উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবা দিয়েছে, যা ২ মিলিয়ন ঘণ্টার সমপারিমাণ অথবা ১ মিলিয়ন ফুলটাইম চাকরির সমপরিমাণ। গড়ে বছরে একজন স্বেচ্ছাসেবক ১৬৮ ঘণ্টা সামাজিক উন্নয়নে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছে। আমেরিকাতে গত বছর ৬৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ দেশের জন্য স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছে। বিভিন্ন দেশে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করতে স্বেচ্ছাসেবকদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মানিত করে 'দি প্রেসিডেন্ট ভলান্টিয়ার সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড' দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সরকারও যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রতি বছর যুব অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে থাকে। 
উন্নত বিশ্বের স্বেচ্ছাশ্রমের পরিসংখ্যান খুবই ঈর্ষণীয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যানে বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবকদের যে সংখ্যা উল্লেখ আছে তা খুবই নগণ্য। আশার বিষয় হলো, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অনেক অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ শুরু করেছে, যারা সরকারের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে। 
স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে যেমন দেশসেবা, জনসেবা হয়; তেমনি আরও সুফলও রয়েছে। নতুনদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চমৎকার সুযোগ এটি। এর মাধ্যমে নতুন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা যায়। স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে ভালো কাজের আত্মতৃপ্তিও আসে। 
আমাদের দেশে দলগতভাবে স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত এ রকম কিছু প্রতিষ্ঠান- ইউনাইটেড নেশন ভলান্টিয়ার-বাংলাদেশ, ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি প্রভৃতি।