Saturday, October 12, 2013

স্বেচ্ছাশ্রম: পরিচয় ও গুরুত্ব

স্বেচ্ছাশ্রম: পরিচয় ও গুরুত্ব
-ওসামা বিন নূর

আজ(০৫ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস। সেবার প্রতি ব্রত নিয়ে দিবসটির আগমন। সেবাই প্রকৃত ধর্ম। আর সেই সেবার মনমানসিকতা নিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে স্বাধীনভাবে নির্দিষ্ট সময়, কর্মশক্তি ও দক্ষতার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করাকে স্বেচ্ছাসেবা বলা হয়। স্বপ্রণোদিত হয়ে সামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজ এবং সম্ভাবনাময় উদ্যোগ গ্রহণ করে সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবা করা যায়। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে আজ গ্রাম-গ্রামান্তরে স্বেচ্ছাশ্রমের আগ্রহ বেড়েছে। দেশপ্রেমের মূলমন্ত্র থেকেই স্বেচ্ছাসেবার জন্ম।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জন হলো স্বেচ্ছাশ্রমের বড় উদাহরণ। দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন লাখো বাঙালি আর আমাদের দিয়ে গেছেন স্বাধীন ভাষা, স্বাধীন রাষ্ট্র। এ ছাড়া এ বছরের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে আটকে থাকা শ্রমিক উদ্ধারের ঘটনাও বড় বিষয়। আমাদের এ রকম নানা দুর্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের দৃষ্টান্ত আমরা দেখি। স্বেচ্ছাশ্রম একটি সমষ্টিগত কল্যাণ প্রচেষ্টা। আমাদের রয়েছে প্রচুর জনসম্পদ। এই জনসম্পদকে যদি স্বেচ্ছাসেবায় আগ্রহী করে তোলা যায়, তাহলে সবার পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে।
ব্যক্তি তার দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্নভাবে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করতে পারে। যার যার অবস্থান থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী সেটা যেমন সশরীরে হতে পারে, তেমনি ইন্টারনেটের যুগে ভার্চুয়ালিও হতে পারে। ছোট ছোট কাজ_ রাস্তার পাশে বৃক্ষ রোপণ করা যেমন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, তেমনি পরিবেশ রক্ষায় অন্যান্য কাজসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সুনামি, ভূমিকম্প, বন্যা, হারিকেন ইত্যাদি অবস্থায় জরুরিভাবে স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত করাও এর অন্তর্ভুক্ত।
স্বেচ্ছাসেবার নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হতে পারে, আবার কমিউনিটিতে নিজস্ব এলাকায় সব সমস্যা দূরীকরণে একটি স্বেচ্ছাকর্মী দল গঠন করে তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কমিউনিটি সমস্যার সমাধানে হতে পারে। যেমন, গ্রামের ভাঙা রাস্তা মেরামতে সবাই যৌথভাবে কাজ করে রাস্তা ঠিক করা বা এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকলে সবার সহযোগিতায় ডাস্টবিন স্থাপন ইত্যাদি।
উন্নয়নশীল দেশগুলো স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে তাদের নিজেদের, সমাজের ও দেশের উন্নয়ন করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে। কানাডায় ২০১০ সালে ১২ মিলিয়ন কানাডিয়ান বা ৪৫% জনগণ (১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব) দেশের উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবা দিয়েছে, যা ২ মিলিয়ন ঘণ্টার সমপারিমাণ অথবা ১ মিলিয়ন ফুলটাইম চাকরির সমপরিমাণ। গড়ে বছরে একজন স্বেচ্ছাসেবক ১৬৮ ঘণ্টা সামাজিক উন্নয়নে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছে। আমেরিকাতে গত বছর ৬৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ দেশের জন্য স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছে। বিভিন্ন দেশে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করতে স্বেচ্ছাসেবকদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মানিত করে 'দি প্রেসিডেন্ট ভলান্টিয়ার সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড' দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সরকারও যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রতি বছর যুব অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে থাকে। 
উন্নত বিশ্বের স্বেচ্ছাশ্রমের পরিসংখ্যান খুবই ঈর্ষণীয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যানে বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবকদের যে সংখ্যা উল্লেখ আছে তা খুবই নগণ্য। আশার বিষয় হলো, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অনেক অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ শুরু করেছে, যারা সরকারের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে। 
স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে যেমন দেশসেবা, জনসেবা হয়; তেমনি আরও সুফলও রয়েছে। নতুনদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চমৎকার সুযোগ এটি। এর মাধ্যমে নতুন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা যায়। স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে ভালো কাজের আত্মতৃপ্তিও আসে। 
আমাদের দেশে দলগতভাবে স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত এ রকম কিছু প্রতিষ্ঠান- ইউনাইটেড নেশন ভলান্টিয়ার-বাংলাদেশ, ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি প্রভৃতি। 


No comments:

Post a Comment