রাছুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: “সমস্ত সৃষ্টিজগত আল্লাহর পরিবার। আল্লাহ পাকের নিকট সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে সৃষ্টিজীবের সাথে ভাল ব্যবহার করে।” (বায়হাকী) “বিধবা এবং গরীবের খোঁজ-খবর যে নেয় সে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদকারীদের মত, ঐ তাহাজ্জুদগুজারের মত যে তাহাজ্জুদ পড়তে পড়তে কান্ত হয় না এবং ঐ রোজাদারের মত যে সর্বদা রোজা রাখে”। (বুখারী-মুসলিম) ‘অবশ্যই একজন মুসলমানের সাদকা তার হায়াত বৃদ্ধি করে, অপমৃত্যু থেকে বাঁচায়, তার থেকে অহংকার ও অহমিকা মহান আল্লাহ দূর করে দেন।’ (মুজামুল কাবীর, হাদীস-১৩৫০৮)
Thursday, December 19, 2013
Monday, December 16, 2013
Friday, December 6, 2013
চা বিক্রেতা রফিকের সোনামনি পাঠশালা
চা বিক্রেতা রফিকের সোনামনি পাঠশালা
আব্দুর রব নাহিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ :
শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঝিলিম ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নেরই একটি গ্রাম ঠাকুর পালশা।
গ্রামটির
অধিকাংশ মানুষই জড়িত চাষবাসের সঙ্গে। শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে খুব একটা ভাবনা নেই তাদের। সেজন্যই হয়তো গ্রামটিতে ছিল না কোনো স্কুল।
আর এই বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে পড়ালেখা না জানা চা বিক্রেতা রফিকুল ইসলামকে। স্বপ্ন দেখেন এই গ্রামে চালু হবে একটি স্কুল। শিক্ষায় আলোয় জীবনের পথ দেখবে গ্রামের কোমলমতি শিশুরা।
তার এই স্বপ্নের কথা গ্রামের অনেকের কাছে বলেন তিনি। সবাই তার এই স্বপ্নকে পাগলামী বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু হাল ছাড়েননি রফিক। জমানো কিছু টাকা আর পোষা একটি গরু বিক্রি করে নিজেই শুরু করেন স্কুল স্থাপনের কাজ।
গ্রামের
এক প্রান্তে এক টুকরো ফসলের জমি ৩৬ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল শুরু হয় রফিকের স্বপ্ন পূরণের সংগ্রাম। গড়ে ওঠে সোনামনি পাঠশালা।
তবে রফিক বিপাকে পড়েন শিক্ষক নির্বাচন নিয়ে। তিনি তো লেখাপড়া জানেন না। তাহলে কে পড়াবে সোনামনি পাঠশালায়? তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন ওই গ্রামেরই মেয়ে মরিয়ম আক্তার। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। স্কুলের বাচ্চাদের পড়ানোর কাজটি মরিয়মই করেন।
ঠাকুর পালশা গ্রামে রফিকের সেই স্বপ্নের সোনামনি পাঠশালায় গিয়ে দেখা যায় চারিদিকে ফসলের মাঠ হলুদ সরষে ফুল মাঝখানে বাঁশ আর চাটাইয়ের বেড়া দেওয়া দুটো টিনের চালাঘর। সামনে পটপট করে উঠছে লাল সবুজের পতাকা। একটু কাছে যেতেই দেখা গেল ছোট একটি সাইন বোর্ড। তাতে লেখা সোনামনি পাঠশালা। শ্রেণি কক্ষে নেই কোনো চেয়ার টেবিল কিংবা বেঞ্চ। চট বিছিয়ে চলছে লেখাপড়া ।
গ্রামের
হত দরিদ্র পরিবারের অন্তত ৫০ জন শিশু লেখাপড়া করে সোনামনি পাঠশালায়।
কথা হয় স্কুলের একমাত্র শিক্ষক মরিয়মের সঙ্গে। মরিয়ম আক্তার জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি শিশুদের পড়াতে তার ভালই লাগে।
তিনি আরও বলেন, ‘ আমাদের গ্রাম থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অনেক দূরে হওয়ায় অনেক শিশুই আগে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেত না। রফিক ভাই এই স্কুল করাতে গ্রামের সবার জন্য ভালো হয়েছে।’
কিভাবে স্কুল পরিচালনার খরচ যোগান জানতে চাইলে রফিক জানান, বাচ্চাদের কাছ থেকে মাসে ২০ ও ৪০ টাকা করে তোলা হয়। তবে অনেকেই তা দিতে পারে না। পাঁচশ’ থেকে এক হাজার টাকা উঠলে তা শিক্ষক মরিয়মকে দেন তিনি। আবার কোন মাসে মরিয়মকে কিছুই দেওয়া সম্ভব হয় না।
তার চায়ের দোকান থেকে যে আয় হয় তা থেকে সংসার চালানোর পাশাপাশি স্কুলের কিছু খরচেরও যোগান দেন তিনি।
তবে স্বপ্নচারী এ মানুষটি স্কুলের খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। স্কুলের টিন কেনার আট হাজার টাকা দোকানে বাকি রয়েছে বলে জানান রফিক।
তাছাড়া ১০ বছর পর স্কুলের জমির লিজের মেয়াদ শেষ হলে মালিক জমি নিয়ে নেবে। এরপর কী হবে ভেবে শঙ্কিত রফিক।
তবে আশাবাদী রফিক জানান, ‘আমি যদি স্কুলটি ভালভাবে দাঁড় করাতে পারি তাহলে ১০ বছর পর এই জমি স্কুলেরই হবে।’
তিনি আশাবাদী গ্রামবাসী চাঁদা তুলে হলেও জমিটি স্কুলের জন্য কিনে দেবে। তা না হয় তাহলে অন্তত সরকার জমিটি কিনে স্কুলটি চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে।
তিনি জানান, সবার সহযোগিতা পেলে বাচ্চাদের জন্য বেঞ্চ ও চেয়ার টেবিল কেনা সম্ভব হবে।
স্কুলের
জন্য এখন পর্যন্ত সরকারি আর্থিক অনুদান পাননি রফিক। সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই তিনি স্কুলটি চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে চলতি বছর শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলামের সহযোগিতায় প্রথম শ্রেণির জন্য নতুন বই উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সাত্তার জানান, কারও ব্যক্তিগতভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার সুযোগ নেই। সরকার প্রয়োজন মনে করলে সেখানে বিদ্যালয় করবে।
তবে সোনামনি পাঠশালার বিষয়টি জানতেন না বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি খোঁজ নেব। সেখানে যদি আরও বই এর প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে আমরা সরবরাহ করতে পারি।’
রফিকের স্বপ্ন সরকার ও গ্রামের সবার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাবে সোনামনি পাঠশালা। শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দেবে গ্রামের প্রতিটি ঘরে।
Source: http://www.thereport24.com
মু’মিনরা মুছার মায়ের মত- সন্তান লালন-পালন করা অন্যতম সৃষ্টির সেবা
সন্তান লালন-পালন করা অন্যতম সৃষ্টির সেবা হিসাবে গণ্য। মানুষ সন্তানকে এমনিতেই লালন-পালন করে থাকে। একাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে আল্লাহ-রাছুলের দেখানো পদ্ধতিতে করা হয় তাহলে তা ইবাদত - সৃষ্টির সেবা জাতীয় ইবাদত। রাছূল (সাঃ) থেকে জানা যায় যে, “মু’মিনরা মুছার মায়ের মত” অর্থাৎ মুছা(আঃ)-এর মা নিজের সন্তানেরই লালন-পালন করতেন এবং তা করেই ফেরাউন থেকে বেতন পেতেন। তদ্রুপ মু’মিনরা নিজ সন্তানকেই লালন-পালন করে এবং তা করে আল্লাহর কাছে বিনিময় পান। এচেতনা মু’মিনদের সন্তান লালন-পালনে শ্রমে ব্যয়ে অধিক শক্তি যোগাবে নিঃসন্দেহে। নীচে সন্তান লালন-পালনে ইসলামের নির্দেশ সম্পর্কে একটা আলোচনা তুলে ধরা হল -
সন্তানের জন্য মা বাবার দায়িত্ব
আল্লাহ তা‘আলা মানব জীবনকে সন্তান-সন্তুতির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ এবং
আকর্ষণীয় করেছেন। পারিবারিক জীবনে সন্তান-সন্ততি কতবড় নিয়ামত তা যার সন্তান
হয়নি তিনি সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করে থাকেন। যাদেরকে আল্লাহ রাববুল আলামীন
সন্তান দান করেছেন তাদের উপর এক মহান দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। পিতা-মাতার
জন্য সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হবে যদি সন্তানকে আদর্শবান রূপে গড়ে না তুলতে
পারেন। কেননা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَا مِـنْ مَـوْلُـودٍ إِلاَّ يـُولَـدُ عَــلَى الْــفـِطْـرَةِ
فَـأَبـَوَاهُ يُهَـوِّدَانِـهِ ، أَوْ يُنَصِّرَانِهِ ، أَوْ
يـُمَجـِّسـَانِهِ»
প্রতিটি নবজাতক তার স্বভাবজাত দ্বীন ইসলামের ওপর জন্ম গ্রহণ করে। অতঃপর
তার মা-বাবা তাকে ইয়াহূদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক হিসেবে গড়ে তোলে (সহীহ
বুখারী: ১৩৫৮) ।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা দিন দিন যেভাবে অপসংস্কৃতি, অনৈতিকতা এবং চরিত্র
বিধ্বংসী কাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেখানে আমাদের সন্তানের উপর যেসব দায়িত্ব
আছে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
নির্দেশিত পন্থায় সন্তানকে লালন-পালন করা ঈমানের অন্যতম দাবী। আমাদের উপর
সন্তানদের যে হকগুলো রয়েছে তা এখানে আলোচনা করা হলো :
১. কানে আযান দেয়া : সন্তান দুনিয়াতে আসার পর গোসল দিয়ে পরিষ্কার করে
তার ডান কানে আযান দেয়া, তা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। এটি পিতা-মাতার উপর
এজন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বযে, শিশুর কানে সর্বপ্রথম আল্লাহর
শ্রেষ্ঠত্বের আওয়াজ পৌঁছে দেয়া এবং ওত পেতে থাকা শয়তান যাতে তার কোন ক্ষতি
না করতে পারে। হাদিসে এসেছে,
عَنْ عُـبـَيْـدِ اللـهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ ، عَنْ أَبِـيهِ ، قَالَ :
رَأَيْـتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم «أَذَّنَ فِي أُذُنِ
الْحـَسَنِ بْـنِ عَلِيٍّ حِـيـنَ وَلَـدَتْـهُ فَاطِمَةُ بِالصَّلاَةِ».
আবূ রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসান ইবনে আলীর কানে আযান দিতে দেখেছি
(সুনান আবূ দাউদ:৫১০৫)
২. সুন্দর নাম রাখা : বাচ্চার জন্য সুন্দর নাম নির্বাচন করা পিতা-মাতার
অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। নাম অর্থবহ হওয়া নামের সৌন্দর্য। কেননা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন অনেক অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে
দিয়েছিলেন। (আবু দাউদ ৪৯৫২-৪৯৬১)
৩. আক্বিকা করা : ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম বিষয় হলো সন্তানের আকীকা করা।
ছেলের পক্ষ থেকে ২টি ছাগল এবং মেয়ের পক্ষ থেকে ১টি ছাগল আল্লাহর নামে যবেহ
করা। হাদীসে এসেছে,
عَنْ سَمُرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ: «كُـلُّ غُـلَامٍ رَهِـيـنَـةٌ بِعَـقـِيـقَـتِهِ تُـذْبَـحُ
عَـنْـهُ يَوْمَ السَّابِعِ وَيُـحْـلَـقُ رَأْسُـهُ»
সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল নবজাতক তার আক্বিকার সাথে
আবদ্ধ। জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে জবেহ করা হবে। ঐ দিন তার নাম রাখা
হবে। আর তার মাথার চুল কামানো হবে। (সুনান আবূ দাউদ: ২৮৩৮)
৪. সদকাহ করা : ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সপ্তম দিবসে চুল কাটা এবং চুল
পরিমাণ রৌপ্য সদকাহ করা সুন্নাত। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান রা. এর পক্ষ থেকে ১টি
বকরী আকীকা দিয়েছেন এবং বলেছেন, হে ফাতেমা ! তার মাথা মুণ্ডন কর এবং চুল
পরিমাণ রৌপ্য সদকাহ কর। (সুনান আত-তিরমিযী: ১৫১৯) এছাড়া রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদেরকে খেজুর দিয়ে তাহনীক এবং বরকতের
জন্য দো‘আ করতেন। (সহীহ বুখারী: ৩৯০৯; মুসলিম: ২১৪৬)
৫. খাতনা করা : ছেলেদের খাতনা করানো একটি অন্যতম সুন্নাত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : «عَــقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم
عَـنِ الْـحَسـَنِ وَالْـحُـسَـيْـنِ وَخَــتــَنـَهُـمـَا لِـسَـبْعَـةِ
أَيَّـامٍ».
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সপ্তম দিবসে আকীকা এবং
খাতনা করিয়েছেন। (আল-মু‘জামুল আওসাত: ৬৭০৮)
৬. তাওহীদ শিক্ষা দেয়া : শিশু যখন কথা বলা আরম্ভ করবে তখন থেকেই আল্লাহর
তাওহীদ শিক্ষা দতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবন
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেন,
«يَا غُـلَامُ إِنِّـي أُعَـلِّـمُـكَ كَـلِمَـاتٍ، احـْفَـظِ الـلَّهَ
يَحـْفَـظْــكَ، احْـفَــظِ الـلَّهَ تَـجِـدْهُ تُـجَـاهَــكَ، إِذَا
سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْـتَعَـنـْتَ فَاسْـتَعِــنْ
بِالـلـَّهِ، وَاعْـلَـمْ أَنَّ الأُمَّـةَ لَـوْ اجْـتَمَعَتْ عَـلَى أَنْ
يَـنـْفَـعُوكَ بِـشـَيْءٍ لَـمْ يَـنْـفَعُوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ
كَـتَـبَهُ اللَّهُ لـَكَ، وَلَوْ اجْـتَـمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ
بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَـدْ كَــتَـبَهُ اللـَّهُ
عَــلَـيْكَ، رُفِـعَـتِ الأَقْلَامُ وَجَـفَّـتْ الصُّـحُـفُ»
‘হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শিখাতে চাই। তুমি আল্লাহর অধিকারের
হেফাযত করবে, আল্লাহও তোমার হেফাযত করবেন। তুমি আল্লাহর অধিকারের হেফাযত
করবে, তুমি তাঁকে সর্বদা সামনে পাবে। যখন কোন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই
চাইবে। আর যখন সহযোগিতা চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর জেনে রাখ! যদি
পুরো জাতি যদি তোমার কোন উপকার করার জন্য একতাবদ্ধ হয়, তবে তোমার কোন উপকার
করতে সমর্থ হবে না, শুধু ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য
লিখে রেখেছেন। আর যদি পুরো জাতি যদি তোমার কোন ক্ষতি করার জন্য একতাবদ্ধ
হয়, তবে তোমার কোন ক্ষতি করতে সমর্থ হবে না, শুধু ততটুকুই করতে পারবে
যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। কলমের লিখা শেষ হয়েছে এবং কাগজসমূহ
শুকিয়ে গেছে। (তিরমিযী: ২৫১৬)
৭. কুরআন শিক্ষা দান : ছোট বেলা থেকেই সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিতে হবে।
কেননা কুরআন শিক্ষা করা ফরয। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিনটি বিষয় শিক্ষা দাও। তন্মধ্যে রয়েছে
তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা ও কুরআনের জ্ঞান দাও। (জামিউল কাবীর)
কুরআন শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উত্তম কাজ আর নেই। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ»
‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’’ (সহীহ বুখারী:৫০২৭)
৮. সলাত শিক্ষা দেয়া ও সলাত আদায়ে অভ্যস্ত করা : এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ
অধিকার যে পিতা-মাতা তার সন্তানকে সলাত শিক্ষা দিবেন এবং সলাত আদায়ে
অভ্যস্ত করাবেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَـيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَـدِّهِ قَالَ قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الـلَّهُ عَـلـَيْهِ وَسَلَّمَ: «مُرُوا
أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُـمْ أَبْـنَاءُ سَـبْعِ سِـنِـينَ
وَاضْـرِبُوهُمْ عَـلـَيْهَا وَهُـمْ أَبْـنَاءُ عَـشـْرٍ وَفــَرِّقُــوا
بَـيـْنَهُمْ فِـي الْـمَضَاجِعِ»
আমর ইবনে শূয়াইব রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাবা তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা
করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের
সন্তানদের সলাতের নির্দেশ দাও সাত বছর বয়সে। আর দশ বছর বয়সে সলাতের জন্য
মৃদু প্রহার কর এবং শোয়ার স্থানে ভিন্নতা আনো। (সুনান আবূ দাউদ: ৪৯৫)
৯. আদব বা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া : সন্তানদের আচরণ শিক্ষা দেয়া
পিতামাতার উপর দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভূক্ত। লুকমান আলাইহিস সালাম তার
সন্তানকে বললেন,
﴿وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ﴾
﴿وَاقْصِدْ فِي مَـشْـيـِكَ وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ ۚ إِنَّ أَنكَـرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَـمِـيـرِ﴾
‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যমীনে দম্ভভরে
চলাফেরা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না। আর
তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নীচু কর; নিশ্চয়
সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ।’ ( সূরা লুকমান ১৮,১৯)
১০.আদর স্নেহ ও ভালবাসা দেয়া : সন্তানদেরকে স্নেহ করা এবং তাদেরকে
আন্তরিকভাবে ভালবাসতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনে আলী
রাদিয়াল্লাহু আনহুকে চুম্বন দিলেন এবং আদর করলেন। সে সময় আকরা ইবনে হাবিস
রাদিয়াল্লাহু আনহুও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমারতো দশটি সন্তান
কিন্তু আমিতো কখনো আমার সন্তানদেরকে আদর স্নেহ করিনি। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, যে অন্যের
প্রতি রহম করে না আল্লাহও তার প্রতি রহম করেন না। (সহীহ বুখারী: ৫৯৯৭)
১১. দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেয়া : সন্তানকে দীনি ইলম শিক্ষা দেয়া ফরজ করা
হয়েছে। কারণ দ্বীনি ইলম না জানা থাকলে সে বিভ্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্থদের
অন্তর্ভূক্ত হবে। হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله
عَليْهِ وسَلَّمَ : «طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ»
আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয।
(সুনান ইবন মাজাহ: ২২৪)
১২. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করা : সন্তানদেরকে প্রাপ্ত
বয়স্ক পর্যন্ত লালন-পালন করতে হবে এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ করতে হবে।
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قُـلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَـلْ لِي مِنْ
أَجْـرٍ فِـي بَنِي أَبِي سَلَمَةَ أَنْ أُنْـفِـقَ عَــلَــيْهِــمْ
وَلــَسْـتُ بِــتَـارِكَــتِهِــمْ هَــكَــذَا وَهَــكَــذَا إِنَّــمَـا
هُـمْ بَـنِيَّ قَالَ: «نَعَمْ لَكِ أَجـْرُ مَا أَنـْفَـقــْتِ
عَــلَـيْهِـمْ»
উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম আবূ সালামার
সন্তানদের জন্য আমি যদি খরচ করি এতে কি আমার জন্য প্রতিদান রয়েছে? নবী
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ যতদিন তুমি খরচ করবে ততদিন
তোমার জন্য প্রতিদান থাকবে। (সহীহ বুখারী: ৫৩৬৯)
১৩. সক্ষম করে তোলা : সন্তানদেরকে এমনভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলা,তারা যেন
উপার্জন করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আমাকে এভাবে বলেছেন,
«إِنَّــكَ أَنْ تَــدَعَ وَرَثــَتَــكَ أَغْــنِــيَـاءَ خــَيــْرٌ
مِــنْ أَنْ تَـــدَعَــهُــمْ عَــالَـةً يــَتَـــكَـــفَّـــفُـــونَ
الــنَّــاسَ فِي أَيـــْدِيهِــمْ»
তোমাদের সন্তান সন্ততিদেরকে সক্ষম ও সাবলম্বি রেখে যাওয়া, তাদেরকে অভাবী
ও মানুষের কাছে হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। (সহীহ
বুখারী:১২৯৫)
১৪. বিবাহ দেয়া : সুন্নাহ পদ্ধতিতে বিবাহ দেয়া এবং বিবাহর যাবতীয় কাজ
সম্পাদন করা এবং উপযুক্ত সময়ে বিবাহর ব্যবস্থা করা। আবূ হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই পিতার উপর
সন্তানের হকের মধ্যে রয়েছে, সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিবাহ দেবে।
(জামিউল কাবীর)
১৫. দ্বীনের পথে পরিচালিত করা : পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব হলো
সন্তানদেরকে দ্বীনের পথে, কুরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনা করা, দ্বীনের বিধান
পালনের ক্ষেত্রে অভ্যস্ত করে তোলা। কুরআনে এসেছে,
﴿قُـلۡ هَٰــذِهِۦ سَـبـِيـلِيٓ أَدۡعُــوٓاْ إِلَى ٱلــلَّهِۚ عَــلَىٰ
بَـصِيـرَةٍ أَنَـا۠ وَمَـنِ ٱتَّــبَعَـنِيۖ وَسُـبۡحـَٰنَ ٱللـَّهِ
وَمَـآ أَنَـا۠ مِـنَ ٱلۡــمُــشۡرِكـِيـنَ ١٠٨﴾ )يوسف:108(
‘ বল, ‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা
আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের
অন্তর্ভূক্ত নই’। (সূরা ইউসুফ : ১০৮)
সন্তানকে দ্বীনের পথে পরিচালনার মাধ্যমে সওয়াব অর্জন করার এক বিরাট
সুযোগ রয়েছে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন,
«فَوَاللَّهِ لَأَنْ يُهْدَى بِكَ رَجُلٌ وَاحِدٌ خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ»
তোমার মাধ্যমে একজনও যদি হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, তবে তা হবে তোমার জন্য লালবর্ণের অতি মূল্যবান উট থেকেও উত্তম। (সহীহ বুখারী)
১৬. সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করা : সন্তানগণ পিতামাতার কাছ থেকে ইনসাফ আশা
করে এবং তাদের মাঝে ইনসাফ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন,
‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তাদের মাঝে ইনসাফ করো’। (সহীহ
বুখারী: ২৫৮৭)
১৭. ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কাজ থেকে বিরত রাখা : ইসলাম অনুমোদন করে
না এমন কাজ থেকে তাদেরকে বিরত না রাখলে এই সন্তানগনই কিয়ামাতে পিতামাতার
বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। কুরআনে এসেছে,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارا ﴾ )التحريم:6(
হে ইমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। (সূরা আত-তাহরীম-৬)
﴿وَقَـالَ ٱلَّـذِيـنَ كَـفَـرُواْ رَبَّــنَآ أَرِنَــا
ٱلّــَذَيۡــنِ أَضَــلَّانَا مِنَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِ نَـجۡــعَـلۡهُمَا
تَحۡــتَ أَقۡــدَامِــنَـا لِــيَكـُونَا مِنَ ٱلۡأَسۡــفَــلِــيـنَ ٢٩﴾
)فصلت: 29(
আর কাফিররা বলবে, ‘হে আমাদের রব, জ্বিন ও মানুষের মধ্যে যারা আমাদেরকে
পথভ্রষ্ট করেছে তাদেরকে আমাদের দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে আমাদের পায়ের
নীচে রাখব, যাতে তারা নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়। (সূরা হা-মীম আসসিজদাহ-২৯
)
১৮. পাপকাজ, অশ্লিলতা, বেহায়াপনা, অপসংস্কৃতি থেকে বিরত রাখা : সন্তান
দুনিয়ার আসার সাথে সাথে শয়তান তার পেছনে লেগে যায় এবং বিভিন্নভাবে, ভিন্ন
ভিন্ন রুপে,পোশাক-পরিচ্ছেদের মাধ্যমে, বিভিন্ন ফ্যাশনে, বিভিন্ন ডিজাইনে,
বিভিন্ন শিক্ষার নামে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করে। তাই
পিতা-মাতাকে অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন,
﴿ يَٰٓــأَيُّــهَا ٱلّـَذِينَ ءَامـَنـُوٓاْ إِنَّ مِنۡ أَزۡوَٰجِكُمۡ
وَأَوۡلَٰـدِكُـمۡ عَــدُوّا لَّـكُـمۡ فَٱحۡــذَرُوهُــمۡۚ وَإِن
تَعۡــفُــواْ وَتَـصۡفَـحُــواْ وَتَــغۡــفِــرُواْ فَـإِنَّ ٱللَّهَ
غَـفُـور رَّحِيمٌ ١٤ ﴾ )التغابن:14(
হে মুমিনগণ, তোমাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের কেউ কেউ তোমাদের
দুশমন। অতএব তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। আর যদি তোমরা
মার্জনা কর, এড়িয়ে যাও এবং মাফ করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল,
অসীম দয়ালু। (সূরা তাগাবুন-১৪)
হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : «لَعَنَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْـمـُتَـشــَبِّـهِــيـنَ مِــنَ
الرِّجَالِ بِالــنِّسَاءِ وَالْــمُــتــَشَــبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ
بِالرِّجَالِ»
ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম রাসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ
ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। (সহীহ বুখারী:৫৮৮৫)
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم « مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ».
‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সা-দৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। (সুনান আবূ দাউদ:৪০৩১)
১৯. দো‘আ করা : আমাদের সন্তানদের জন্য দো‘আ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দো‘আ শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে,
﴿ وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا
وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُن وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤
﴾ )الفرقان: 74(
আল্লাহর নেক বান্দা তারাই যারা বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও
সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে
মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন। (সূরা আলফুরকান-৭৪)
যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকট দো‘আ করেছিলেন,
﴿ هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُۥۖ قَالَ رَبِّ هَبۡ لِي مِن
لَّدُنكَ ذُرِّيَّة طَيِّبَةًۖ إِنَّكَ سَمِيعُ ٱلدُّعَآءِ ٣٨ ﴾ ) آل
عمران:38(
‘হে আমার রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’। (সূরা আলে ইমরান ৩৮)
সম্মানিত পিতামাতাবৃন্দ, আমরা কি সন্তানের হকগুলো পালন করতে পেরেছি বা
পারছি ? আসুন, আমরা আমাদের সন্তানদেরকে নেকসন্তান হিসাবে গড়ে তুলি। যে
সম্পর্কে হাদিসে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-
قَالَ « إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ
ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ
أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ»
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে
যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-
১. সদকায়ে জারিয়া
২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়
৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দো‘আ করে [সহিহ মুসলিম:১৬৩১]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সন্তানদেরকে কবুল করুন,
তাদের হকসমূহ যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দিন। আমীন!
Source: http://ipcblogger.net
Saturday, October 26, 2013
আপনি কি এখন বুঝতে পারছেন আপনার মা কতটা কষ্ট করে আপনাকে জন্ম দিয়েছেন? মাতা-পিতার সেবা সর্বোত্তম সৃষ্টির সেবা
মাতা-পিতার সেবা সর্বোত্তম সৃষ্টির সেবা। মাতা-পিতার সেবা সম্পর্কে আলোচনা ও ভিডিও দেয়া হল:
মাতা-পিতার সেবা ইবাদতেরই অংশ
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : আর তোমার
প্রতিপালক এ আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাকে ভিন্ন অপর কারও ইবাদত করো না।
পিতা-মাতার প্রতি উত্তম আচরণ করো। যদি তাঁদের একজন কিংবা উভয়ে তোমার নিকট
বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের উদ্দেশ্যে কখনও উহ্ পর্যন্ত করবে না।
তাদেরকে ধমক দিয়ো না বরং তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও মার্জিত কথা বলো।
আর তাদের উদ্দেশ্যে অনুগ্রহে বিনয়ের বাহু অবনমিত করো। আর বলো হে আমার
প্রতিপালক! তাদের উভয়কে অনুগ্রহ করো। যেমন তারা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন
করেছেন। (সূরা বনী-ইসরাইল-২৩/২৪) আল্লাহর অধিকারের পরই কুরআন ও
হাদীসের ভাষ্যনুযায়ী মাতা-পিতার অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
কুরআনুল কারীমে যেখানে আল্লাহর ইবাদতের কথা উল্লেখ রয়েছে, প্রায় সব
জায়গায়ই সঙ্গে সঙ্গে পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের ওপর গুরুত্ব দেয়া
হয়েছে।
মাতা-পিতার অধিকার হচ্ছে :
আমরা তাদের ভালোবাসবো, তাদের অনুগত হয়ে চলবো, আর সাধ্যানুযায়ী আমরা
তাদের সাহায্য সহানুভূতি দেখাবো, বিশেষত তারা যখন বয়ঃবৃদ্ধ হন তখন তাদের
সর্বোতকৃষ্ট সেবা করবো। মানুষের প্রকৃতিই এমন যে, যখন মানুষ বৃদ্ধ হয়, তখন
সাধারণত কর্কশ মেজাজের হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় তারা বিভিন্ন প্রকারের
শিশুসুলভ আচরণও করে থাকেন, এমনকি এমন কিছু আবদার করে যা অনাকাঙ্খিত। তাদের
এসব আচার-আচরণ দেখে কিছুটা রাগ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু না, তাদের প্রতি
বিন্দুমাত্র রাগ করা যাবে না। তখন মনে করতে হবে সেই সময়ের কথা। যখন আমরা
ছোট ছিলাম, আর আমাদের আব্বা-আম্মা আমাদের নানা প্রকারের খারাপ আচরণে কোনও
প্রকারের রাগ করতেন না। এমনকি বিভিন্ন প্রকারের অহেতুক আবদারেও তারা
বিন্দুমাত্র রাগ করতেন না বরং নিজের সর্বপ্রকার প্রচেষ্টার মাধ্যমে তা পূরণ
করার জন্য সচেষ্ট হতেন। যেমনটি আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন কুরআনুল কারীমের
মাধ্যমে আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।
পিতা-মাতারকে বার্ধক্যে করুণ অবস্থায়
পাওয়া যে কোনও সন্তানের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আর এই সৌভাগ্যকে যারা
কাজে লাগাতে পারল না তাদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য। কেননা, হযরত আবু হুরায়রা
(রা.) হতে বর্ণিত নবী করীম (সা.) বলেছেন: তার নাক ধুলায় মলিন হোক, তার নাক
ধুলায় মলিন হোক, তার নাক ধুলায় মলিন হোক। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে
আল্লাহর রাসূল! সেই হতভাগ্য ব্যক্তিটি কে? রাসূল (সা.) জবাব দিলেন: সে হলো
সেই ব্যক্তি যে তার বাবা-মা উভয়কে অথবা কোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায়
পেয়েও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। (মুসলিম)
এ ছাড়াও বাবা-মার মর্যাদা সম্পর্কে
আল্লাহর হাবীব আরও বলেন: আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল
(সা.)-কে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সন্তানের ওপর বাবা-মার কি হক আছে? তিনি বললেন, তারা তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম। (ইবনে মাজা)
এছাড়া আল্লামা ইউসূফ ইসলাহী তার বাবা-মা ও সন্তানের অধিকার গ্রন্থে মাতা-পিতার ১১টি অধিকার বর্ণনা করেছেন :
১. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা,
২. সর্বদা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা,
৩. তাদের আবেগের প্রতি দৃষ্টি রাখা,
৪. যথাযথ খেদমত করা,
৫. সুন্দর আচরণ করা,
৬. সর্বদা আদব ও সম্মান প্রদর্শন করা,
৭. তাদের মান্য করা,
৮. দোয়া করা ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা,
৯. মহব্বত প্রদর্শন করা,
১০. আর্থিক সহায়তা প্রদান করা এবং
১১. সর্বদা তাদের নাফরমানী হতে দূরে থাকা।
পিতা-মাতার অধিকার বা হক শুধু জীবদ্দশায়ই
শেষ হয়ে যায় না বরং তাদের হক শাশ্বত বা চিরঞ্জীব অর্থাৎ, অনন্তকাল ধরে
রয়েই যায়। একটি পর্যায়ে একটু কাজ করেই শেষ হয়ে যাবে ব্যাপারটা কিন্তু
এমন নয়, বরং মৃত্যুর পরেও তাদের প্রতি আমাদের অনেক কর্তব্য রয়েছে।
আর তা হচ্ছে:
১. তাদের জন্য দোয়া ও ইসতিগফার করা,
২. তাদের অসিয়ত পূরণ করা,
৩. পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সদাচরণ করা এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং
৪.
তাদের দিকের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। এ সম্পর্কে রাসূল (সা)
বলেছেন: হযরত আবু উসাইদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে বসা ছিলাম। হঠাত বনী সালমা গোত্রের এক ব্যক্তি
সেখানে উপস্থিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর
নবী! পিতা-মাতা ইন্তেকালের পরেও কি তাদের হক আমার উপরে আছে, যা পূরণ করতে
হবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ আছে। তাদের জন্য দোয়া ইস্তেগফার
করবে, তাদের কোনো অসিয়ত থাকলে তা পূরণ করবে, পিতৃ ও মাতৃকুলের আত্মীয়দের
সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করবে (আবু
দাউদ) আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের তাওফীক দান করুন।
আমীন!
Source: http://www.new-muslims.info
ক্ষেত্র বিশেষে মাতা-পিতার সেবা করা জিহাদের চেয়ে উত্তম
- বি. এম. শওকত আলী
ক্ষেত্র বিশেষে মাতা-পিতার সেবা করা জিহাদের চেয়ে উত্তম। মুআবিয়া ইবন
জাহিমা আস সুলামি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং
পরকালীন নাজাত লাভের উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বললেন,
আফসোস তোমার জন্য! তোমার মা কি বেঁচে আছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ বেঁচে আছেন।
তিনি বললেন, যাও তার খেদমতে আত্মনিয়োগ করো। এরপর আমি অন্যদিক থেকে এসে আরজ
করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তির আশায়
আপনার সঙ্গে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বললেন, আফসোস তোমার জন্য! তোমার মা কি
বেঁচে নেই? আমি বললাম, হ্যাঁ, বেঁচে আছেন। তিনি বললেন, যাও তাঁর সেবা করো।
অতঃপর আমি তাঁর সামনের দিক দিয়ে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর
সন্তুষ্টি ও পরকালীন সফলতা লাভের আশায় আপনার সঙ্গে জিহাদে শামিল হতে চাই।
তিনি বললেন, তোমার মা কি বেঁচে আছেন? হ্যাঁ বেঁচে আছেন। তিনি বললেন, যাও
তাঁর সেবা করো। অতঃপর আমি তাঁর সামনের দিক দিয়ে এসে বললাম, হে আল্লাহর
রাসুল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফলতা লাভের আশায় আপনার সঙ্গে
জিহাদে শামিল হতে চাই। তিনি বললেন, আফসোস তোমার জন্য! তোমার মা কি বেঁচে
নেই? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহের! আমার মা বেঁচে আছেন। তিনি আমাকে বললেন,
আফসোস তোমার জন্য তুমি তোমার মায়ের চরণ অাঁকড়ে ধর। সেখানেই রয়েছে জান্নাত।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি ইয়ামেন থেকে হিজরত করে রাসুলুল্লাহের (সা.) এর দরবারে এসেছে। রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি শিরক পরিত্যাগ করে এসেছ। তবে তোমার জিহাদ বাকি রয়ে গেছে। ইয়ামেনে কি তোমার মাতা-পিতা নেই? লোকটি বলল, হ্যাঁ আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাঁরা কি তোমাকে জিহাদে আসার অনুমতি দিয়েছে? জবাবে লোকটি বলল, না অনুমতি দেয়নি। রাসুলুল্লাহের (সা.) তাকে বললেন, তোমার মাতা-পিতার কাছে যাও, তাঁরা অনুমতি দিলে জিহাদের জন্য এসো। অন্যথায় তাঁদের সেবা-যত্ন কর।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলের (সা.) দরবারে এসে আরজ করল, (ইয়া রাসুলুল্লাহের )! আমার জিহাদে যাওয়ার খুব ইচ্ছা, অথচ আমার সেই সামর্থ্য নেই। রাসুল (সা.) বললেন, তোমার মাতা-পিতা কেউ বেঁচে আছেন কি? লোকটি বলল, আমার মা বেঁচে আছেন? তিনি বললেন, যাও তোমার মায়ের সেবায় নিয়োজিত থেকে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ কর। এটা যদি তুমি করতে পার, তাহলে তুমি হজ ও উমরা এবং আল্লাহর পথে জিহাদকারী হিসেবে পরিগণিত হবে।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহের (সা.) দরবারে এসে আরজ করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন নাজাত লাভের উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে জিহাদ করার জন্য এসেছি। আমাকে আসতে দেখে আমার মাতা-পিতা দুজনই কাঁদছিলেন। একথা শুনে তিনি লোকটিকে বললেন, তুমি তাঁদের কাছে ফিরে যাও এবং তাঁদের মুখে হাসি ফোটাও, যেমনিভাবে তুমি তাঁদের কাঁদিয়েছিলেন।
আল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল, আমি আল্লাহর নিকট থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশায় আপনার নিকট হিজরত ও জিহাদের বাইয়াত করছি। তিনি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মাতা-পিতার মধ্যে কেউ কি জীবিত আছেন? লোকটি উত্তরে বলল, তাঁরা উভয়ে জীবিত আছেন। তিনি লোকটিকে বললেন, তুমি কি বাস্তবিকই আল্লাহর নিকট থেকে হিজরত ও জিহাদের প্রতিদান পেতে চাও? লোকটি জবাবে বলল, হ্যাঁ, পেতে চাই। রাসুলুল্লাহের এরশাদ করলেন, তুমি তোমার মাতা-পিতার কাছে ফিরে যাও, তাঁদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে থাক।
মুয়াবিয়া ইবন জাইমা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন আমার পিতা জাহিমা (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহের ! আমি জিহাদে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা করেছি। এ ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে পরামর্শ করতে এসেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ, আছেন। তিনি বললেন, যাও, মায়ের খেদমতে আত্মনিয়োগ কর। কেননা জান্নাত তাঁর পায়ের কাছে।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি ইয়ামেন থেকে হিজরত করে রাসুলুল্লাহের (সা.) এর দরবারে এসেছে। রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি শিরক পরিত্যাগ করে এসেছ। তবে তোমার জিহাদ বাকি রয়ে গেছে। ইয়ামেনে কি তোমার মাতা-পিতা নেই? লোকটি বলল, হ্যাঁ আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাঁরা কি তোমাকে জিহাদে আসার অনুমতি দিয়েছে? জবাবে লোকটি বলল, না অনুমতি দেয়নি। রাসুলুল্লাহের (সা.) তাকে বললেন, তোমার মাতা-পিতার কাছে যাও, তাঁরা অনুমতি দিলে জিহাদের জন্য এসো। অন্যথায় তাঁদের সেবা-যত্ন কর।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলের (সা.) দরবারে এসে আরজ করল, (ইয়া রাসুলুল্লাহের )! আমার জিহাদে যাওয়ার খুব ইচ্ছা, অথচ আমার সেই সামর্থ্য নেই। রাসুল (সা.) বললেন, তোমার মাতা-পিতা কেউ বেঁচে আছেন কি? লোকটি বলল, আমার মা বেঁচে আছেন? তিনি বললেন, যাও তোমার মায়ের সেবায় নিয়োজিত থেকে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ কর। এটা যদি তুমি করতে পার, তাহলে তুমি হজ ও উমরা এবং আল্লাহর পথে জিহাদকারী হিসেবে পরিগণিত হবে।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহের (সা.) দরবারে এসে আরজ করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন নাজাত লাভের উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে জিহাদ করার জন্য এসেছি। আমাকে আসতে দেখে আমার মাতা-পিতা দুজনই কাঁদছিলেন। একথা শুনে তিনি লোকটিকে বললেন, তুমি তাঁদের কাছে ফিরে যাও এবং তাঁদের মুখে হাসি ফোটাও, যেমনিভাবে তুমি তাঁদের কাঁদিয়েছিলেন।
আল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল, আমি আল্লাহর নিকট থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশায় আপনার নিকট হিজরত ও জিহাদের বাইয়াত করছি। তিনি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মাতা-পিতার মধ্যে কেউ কি জীবিত আছেন? লোকটি উত্তরে বলল, তাঁরা উভয়ে জীবিত আছেন। তিনি লোকটিকে বললেন, তুমি কি বাস্তবিকই আল্লাহর নিকট থেকে হিজরত ও জিহাদের প্রতিদান পেতে চাও? লোকটি জবাবে বলল, হ্যাঁ, পেতে চাই। রাসুলুল্লাহের এরশাদ করলেন, তুমি তোমার মাতা-পিতার কাছে ফিরে যাও, তাঁদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে থাক।
মুয়াবিয়া ইবন জাইমা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন আমার পিতা জাহিমা (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহের ! আমি জিহাদে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা করেছি। এ ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে পরামর্শ করতে এসেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ, আছেন। তিনি বললেন, যাও, মায়ের খেদমতে আত্মনিয়োগ কর। কেননা জান্নাত তাঁর পায়ের কাছে।
Source: http://www.dainikdestiny.com
মাতা-পিতার অধিকার:
পিতা-মাতার নাফরমানী:
Tuesday, October 22, 2013
চা বিক্রি করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন...
-গাজীউল হক, কুমিল্লা | তারিখ: ২৫-০৮-২০১২
বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন! হাঁটেন লাঠিতে ভর দিয়ে। বিদ্যালয়ের বারান্দা ধরে এগোচ্ছেন। বাঁ হাতে চায়ের পেয়ালা। চকিতে নজর বুলিয়ে ঢুকে পড়েন একটি শ্রেণীকক্ষে। তাঁকে দেখে শিক্ষক খানিকটা অপ্রস্তুত; চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান তিনি। ইতস্তত করে বলেন, ‘আপনি আবার কষ্ট করে...।’ জবাবে মানুষটি স্মিত হাসেন। টেবিলের ওপর পেয়ালা নামিয়ে রাখতে রাখতে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করেন, ‘পড়াশোনা কেমন হচ্ছে?’ ছেলেমেয়েরা সমস্বরে বলে, ‘ভালো হচ্ছে দাদু।’ ঠোঁটের ওপর ঝুলে থাকা হাসিটা এবার ছড়িয়ে পড়ে সারা মুখে। হূষ্টচিত্তে শ্রেণীকক্ষ থেকে বের হন।
বয়স তাঁর ৮২। পেশায় দোকানদার, চা বেচে দিন চলে। আরও একটি পরিচয় আছে তাঁর।
তিনি এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। নাম আবদুল খালেক। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার
নলুয়া চাঁদপুর গ্রামে বাড়ি। সেই গ্রামেই বছর ১৫ আগে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা
করেন। নাম দেন নলুয়া চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা তাঁকে দাদু
বলে ডাকে। অনেকের কাছে এটি ‘দাদুর স্কুল’ নামে পরিচিত।
মনঃপীড়া থেকে স্কুল প্রতিষ্ঠা: কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক লাগোয়া
নলুয়া চাঁদপুর গ্রাম। ১৯৩০ সালে সেই গ্রামে আবদুল খালেকের জন্ম। ১৯৪২ সালে
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার বিজয়পুর উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত
পড়াশোনা করেন তিনি। পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে পড়াটা আর এগোয়নি। মানুষের
বাড়ি বাড়ি ঘুরে নানা জিনিস বেচতেন। একসময় চা বিক্রি শুরু করেন আবদুল খালেক।
সেই পাকিস্তান আমলের কথা। মহাসড়কের পাশে একটি দোকানঘর তোলেন। সেই দোকানে
চা খেতে ভিড় জমাত অনেকে। নিম্নমাধ্যমিকের গণ্ডি পার না হলেও আবদুল খালেক
কথা বলেন শুদ্ধ উচ্চারণে। এ নিয়ে গ্রামের অনেকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করত।
শিক্ষিত তরুণদের নাম বিকৃত করে ডাকত তারা। বিষয়টি তাঁকে মনঃপীড়া দিত ভীষণ।
তিনি ভাবতেন, শিক্ষিত না হলে গ্রামের মানুষজন সভ্যভব্য হবে না। কিন্তু
এলাকায় তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নেই। ছেলেমেয়েরা পড়বে কোথায়! সেই থেকে একটি
বিদ্যালয় গড়ার স্বপ্ন তাঁর মনে।
আবদুল খালেকের সেই স্বপ্ন বাস্তবে এসে ধরা দেয় বহু বছর পর। মুক্তিযুদ্ধের
আগে সড়কের পাশে ৫২ শতাংশ জমি সাত হাজার টাকায় কিনেছিলেন। চা বেচার টাকাতেই
কিনেছিলেন জমিটুকু। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে নিজের শেষ সম্বল সেই জমিটুকুই
বিদ্যালয়কে দান করে দেন।
আবদুল খালেক বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেখলাম এলাকায় শিক্ষিতের হার
বাড়ছে না। বহু লোক নিরক্ষর। যাঁরা শিক্ষিত তাঁদের সম্মান নেই। ওই ভাবনা
থেকেই মনে করলাম, এমন কাজ করতে হবে—যাতে মরলেও মানুষ স্মরণ করে।’
তাঁকে দেখে এগিয়ে এলেন অনেকে: গ্রামের অনেকেই তাঁর স্বপ্নের কথা জানতেন।
একটি বিদ্যালয় করার তাগিদ গ্রামের সচেতন মানুষজনও অনুভব করতেন। কিন্তু সে
জন্য অনেক জমির প্রয়োজন। সে জমি কেনার টাকা মিলবে কোত্থেকে! এ প্রশ্নেই
আটকে ছিল বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। সে উদ্যোগের পালে হাওয়া দিতে এগিয়ে
এলেন আবদুল খালেক। দান করলেন সড়কের পাশের জমিটুকু। তাঁর মহানুভবতা দেখে
এগিয়ে এলেন আরও অনেকে। কেউ টিন দেন, কেউ বাঁশ-কাঠ, কেউ বা দেন টাকা।
গ্রামের মানুষের সহায়তায় দেখতে দেখতে দাঁড়িয়ে যায় প্রায় ৬০ ফুট টিনের ঘরটি।
সাইনবোর্ডে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে লেখা হয় আবদুল খালেকের নাম।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মো. সফিউল্লাহ বলেন, ‘এখন স্কুলে
সাড়ে ৮৬ শতক জমি আছে। এর মধ্যে আবদুল খালেক ৫২ শতক দিয়েছেন। বাকি সাড়ে ৩৪
শতক এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে কিনেছেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হলে কমপক্ষে
৭৫ শতক জমির প্রয়োজন। তাই আবদুল খালেকের উদ্যোগকে টেনে নিয়ে গেছেন
গ্রামবাসী।’ এলাকাবাসী জানায়, তারা সহযোগিতা করেছে ঠিকই। কিন্তু বাতি
জ্বালিয়েছেন আবদুল খালেকই।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রথম সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মজুমদার বলেন,
‘তিনি যে ওই জায়গা বিদ্যালয়ের নামে লিখে দেবেন, ভাবতেই পারিনি। আমাকে
জায়গাটি দেখিয়ে একদিন বলেছিলেন, “এখানে হাইস্কুল হবে। আপনি হবেন এর প্রথম
সভাপতি।” এত বড় ত্যাগ আমাদের সমাজে এ পর্যায়ের মানুষের মধ্যে খুব একটা দেখা
যায় না।’
পেলেন স্কুল, হারালেন অর্ধাঙ্গিনী: সকিনা আক্তার ও আবদুল খালেক দম্পতির ঘরে
ছেলেমেয়ে ছিল না। শুরুতে জমিদানের কথা শুনে স্ত্রী আবদুল খালেককে ‘পাগল’
ঠাওরেছিলেন। ১৯৯৯ সালের ৫ অক্টোবর বিদ্যালয় দেখতে যান সকিনা। বাড়ি ফেরার
পথে বিদ্যালয়ের সামনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। সেদিন জিপ গাড়িটি
চাঁদপুরের দিকে যাচ্ছিল। সকিনার শাড়ির আঁচল গাড়ির পেছনে আটকে যায়। গাড়িটি
তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় শাহরাস্তির নাওড়া-বানিয়াচং এলাকা পর্যন্ত। পরে
স্থানীয় লোকজন তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর থেকে আবদুল খালেক একাই আছেন।
বিদ্যালয়ের পাশেই তাঁর চায়ের দোকান। দোকানে থাকেন সারা দিন, রাতে সেখানেই
ঘুম। কিছু বিস্কুট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখেন দোকানে। এগুলো বেচে দিনে
শ তিনেক টাকা পান। তা দিয়েই চলে যায় তাঁর।
বিদ্যালয়ের ঠিকুজি: ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি ৭০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে নলুয়া
চাঁদপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এমপিওভুক্ত হয় ২০০৪
সালে। বর্তমানে এখানে পাঁচজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক আছেন। আছেন খণ্ডকালীন আরও
পাঁচজন শিক্ষক। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী আছে ২০৫ জন। এ বছর
থেকে নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষা কার্যক্রম চালুর মধ্য দিয়ে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি উচ্চবিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে।
বিদ্যালয়টি থেকে ২০১০ সালে ৩৮ জন শিক্ষার্থী জেএসসি (জুনিয়র স্কুল
সার্টিফিকেট) পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে শতভাগ। গত বছর ৪২ জন পরীক্ষা দিয়ে
পাস করে ৩৯ জন। সহশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিদ্যালয়ে নিয়মিত সাংস্কৃতিক
ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
আবদুল খালেক বলেন, ‘নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকা অবস্থায় অষ্টম শ্রেণীর
ছাত্রছাত্রীরা যখন বিদায় নিত, তখন হাউমাউ করে কাঁদতাম। এখন উচ্চবিদ্যালয়
হওয়ায় বেশ ভালো লাগছে।’
দরদি মানুষটির আক্ষেপ: কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তরে
বিদ্যালয়টি অবস্থিত। টিনের লম্বা ঘরটিতে চারটি শ্রেণীকক্ষ। এ ঘরের পশ্চিমে
আছে তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি আধপাকা ভবন। এর একটিতে শিক্ষকেরা বসেন, বাকি দুটি
শ্রেণীকক্ষ। কিন্তু কোনো কক্ষেই বৈদ্যুতিক পাখা নেই।
‘বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎই নেই, পাখা দিয়ে কী হবে! প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীরা
হাঁসফাঁস করে। মাত্র দুটি খুঁটি বসালেই বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। অথচ এ নিয়ে কেউ
মাথা ঘামায় না।’ আক্ষেপ ঝরে আবদুল খালেকের কণ্ঠে। তিনি বিদ্যালয়ে দলাদলি
পছন্দ করেন না। তাঁর স্বপ্নের বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে রাজনীতি
রয়েছে।
যা-ই ঘটুক, রোজ দুবার বিদ্যালয়ে যান, সবার খোঁজখবর নেন। নিজে চা বানিয়ে
শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের বিনা পয়সায় চা খাওয়ান। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে গিয়ে
শিক্ষকদের চা খাওয়ানোর ওই দৃশ্য দেখা যায়। অবশ্য এখন বয়সের ভারে নুয়ে
পড়েছেন। আগের মতো রোজ চা-বিস্কুট নিয়ে যেতে পারেন না। আবদুল খালেকের কথায়,
‘চা পানে ক্লান্তি দূর হয়, পাঠদানেও আগ্রহের সৃষ্টি হয়। শিক্ষকদের সতেজ
রাখার জন্য চা খাওয়াই।’
সবাই যা বলেন: বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রহিমা আক্তার ও
মাহফুজুর রহমান বলে, দাদু লাঠিতে ভর দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসেন। আমাদের
ক্লাস নিয়মিত হয় কি না জিজ্ঞেস করেন।
নলুয়া চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সফিউল্যাহ বলেন, ‘এখনো
আবদুল খালেক দুই বেলা বিদ্যালয়ে এসে আমাদের কার্যক্রম তদারক করেন। শিক্ষার
প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ আমাদের উজ্জ্বীবিত করে।’
বিদ্যালয় এলাকার ইউপি সদস্য ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য
আবদুর রশিদ বলেন, ‘তিনি আমাদের এলাকার দানবীর। রাস্তার পাশের দামি জমিটাই
তিনি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেছেন।’
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কবির উদ্দীন বলেন,
‘আবদুল খালেকের এমন উদ্যোগ সমাজ ও রাষ্ট্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। চা বিক্রি
করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা ত্যাগী মানুষের পক্ষেই সম্ভব। তিনি ওই এলাকার
বাতিঘর।’
আবদুল খালেক চা বানান, আর শিক্ষার্থীদের হই-হুল্লোড় দেখেন। এসব দেখে তাঁর
প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফলাফল দেখে চোখ বুজতে চান সাদা মনের এই মানুষটি।
Source: http://www.prothom-alo.com/
Thursday, October 17, 2013
একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ ।। ঈদগাঁওয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাজারের আবর্জনা অপসারণ
একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ ।। ঈদগাঁওয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাজারের আবর্জনা অপসারণ
কক্সবাজার সদরের জনগুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ঈদগাঁও বাজারের প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে স্তুপিকৃত দীর্ঘদিনের ময়লা আবর্জনা,কাদামাটি ও স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে অপসারণ করেছে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ইউছুপেরখীল ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে অর্ধদিন ব্যাপী পরিচালিত উক্ত পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সংস্থার ৩৫জন সদস্য ও ৭জন দিন মজুর ২টি ভ্যানগাড়ি ও ৩টি ঠেলাসহযোগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টা ৩০মিনিট থেকে বাজারের উত্তর প্রান্তের শহীদ জয়নাল সড়ক থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক হয়ে দক্ষিণ প্রান্তে দারুল ফাতাহ একাডেমীর গেইট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার ব্যাপী অংশে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করে।
দুপুর ১টা পর্যন্ত স্থায়ী উক্ত কর্মসূচিতে নিয়োজিত সদস্য ও শ্রমিকদেরকে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন শ্রমিকনেতা সেলিম আকবর। উল্লেখ্য, দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক এলাকা ঈদগাঁও বাজার থেকে প্রতিবছর অর্ধকোটি টাকার রাজস্ব আয় হলেও এ বাজারের উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই।
অবশেষে ভুক্তভোগীরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে দেখিয়ে দিলেন ‘আমরা ও পারি’।
Source: http://www.dainikazadi.org
Subscribe to:
Posts (Atom)