Wednesday, October 16, 2013

বাগেরহাটে স্বেচ্ছাশ্রমে ২০টি খালের কচুরিপানা পরিষ্কার

বাগেরহাটে স্বেচ্ছাশ্রমে ২০টি খালের কচুরিপানা পরিষ্কার

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন খাল, বিল জলাশয়ে দীর্ঘদিনের জমে থাকা কচুরিপানা স্বেচ্ছাশ্রমে পরিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত উপজেলার ১০ সহস্রাধিক বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষ পরিষ্কার কাজে অংশ নেন।
জানা গেছে, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের চারটি খালের ১২ কিলোমিটার, ধানসাগর ইউনিয়নের তিনটি খালের ছয় কিলোমিটার, সাউথখালী ইউনিয়নের তিনটি খালের চার কিলোমিটার এবং রায়েন্দা ইউনিয়নের ১০টি খালের সাত কিলোমিটার এলাকার কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়। ছাড়া বিল জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে।
স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেয়া উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের জলিল হাওলাদার, শহিদুল ফরাজী, ফাতেমা বেগম এবং মঞ্জু রানী বলেন, বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা কচুরিপানার কারণে পানিসংকট, মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। কচুরিপানা জমে থাকার কারণে জমি চাষের সময় খাল থেকে পানি তুলতে অসুবিধা হতো ছাড়া পথে কোনো নৌকাও চলাচল করতে পারত না। এসব সমস্যা দূর হবে আশায় প্রশাসনের আহ্বানে আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে অংশ নিয়েছি।
কদমতলা গ্রামের মনোয়ারা বেগমইদ্রিস তালুকদার, মো. আফজাল হাওলাদার, ইয়াকুব আলী তালুকদার বলেন, খালের কচুরিপানা তুলে ফেলায় এখন কৃষিকাজসহজে পানি পাওয়া যাবে এবং ডিঙ্গি নৌকা চালিয়ে মাঠের জমিতে যাওয়া যাবে। স্বেচ্ছাশ্রমে ধরনের জনহিতকর কাজ করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত।
খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান মতিয়ার রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কাজ করা হয়। ধরনের উদ্যোগে এলাকার সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।
কর্মসূচির সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার হোসেন বলেন, সরকারিভাবে কাজ করতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা প্রয়োজন হতো। টাকা ছাড়াই এলাকাবাসীর ইচ্ছায় স্বেচ্ছাশ্রমে তা করা সম্ভব হয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম মামুন উজ্জামান বলেন, উপজেলার ২০টি খালের ১৯ কিলোমিটার এলাকার কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়। প্রায় ১০ সহস্রাধিক লোক কাজে অংশ নেন। এলাকার খাল-বিল জলাশয়ে অন্তত ২০ বছরের জমে থাকা কচুরিপানা পরিষ্কার করার ফলে এলাকাবাসীর পানির সংকট দূর হবে এবং বন্ধ থাকা অভ্যন্তরীণ নৌপথ চালু হবে। প্রশাসনের আহ্বানে উপজেলার শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কৃষক, জেলে, গ্রাম পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, ভিজিডি-ভিজিএফ কার্ডধারী সব শ্রেণীর সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে অংশ নেয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় ব্যান্ড বাজিয়ে কাজে অংশ নেয়া মানুষকে উত্সাহ দেয়। খাল-বিল জলাশয় থেকে তোলা কচুরিপানা দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার চিন্তাও প্রশাসনের রয়েছে।


Monday, October 14, 2013

খেদমতে খালক : আল্লাহকে পাওয়ার সহজ পথ

খেদমতে খালক : আল্লাহকে পাওয়ার সহজ পথ

মামুন মল্লিক

খেদমত একটি সহজ ইবাদত। প্রবাদ আছে—‘খেদমতে খোদা মিলে’। কথাটি ভোরের সূর্যের মতোই সত্য। প্রত্যেক মানুষ তার নিজস্ব কর্মক্ষেত্র থেকে তা করতে পারে। যে কোনো বয়সে যে কোনো ব্য³রি খেদমত করা যায়। আল্লাহতায়ালা খেদমতকারী ব্য³রি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। পরকালে তার জন্য রেখে দিয়েছেন জান্নাত। ইহকালেও মর্যাদার অন্ত নেই। আমাদের কাছে মাখদুমের কদর বেশি হলেও আল্লাহতায়ালার কাছে খাদেমের মূল্য বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) খেদমত সম্পর্কে বলেন, ‘যে ব্য³ িদুনিয়াতে কারও দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন, আল্লাহতায়ালা পরকালে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন।’ খেদমতের ক্ষেত্রও অনেক। ধর্ম, জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্যই খেদমত মহাপুণ্যের কাজ। মূলত এটিই হলো আল্লাহতায়ালাকে পাওয়ার সহজ উপায়। 

পিতামাতা, গুরুজন ও আত্মীয়-স্বজনের খেদমত ছাড়াও কোনো পথিকের বোঝা উঠিয়ে দেয়া, বৃদ্ধ-দুর্বলকে সাহায্য করা, তার বোঝা বহন করা বা কোনো দুর্বল ব্য³ িট্রাফিক জ্যামে সড়ক পার হতে অক্ষম হলে তাকে সড়ক পার করে দেয়া, যদি কেউ বাসের অপেক্ষা করে অথবা ভিড়ের কারণে ধাক্কাধাক্কি ও চাপের মুখে পড়ে যায় তাহলে তাকে বাসে উঠিয়ে দিতে সাহায্য করা। যদি কোনো দুর্বল-বৃদ্ধলোক অথবা মহিলা বাসে উঠে সিট না পায়, তাহলে নিজের সিট ছেড়ে দিয়ে তাদের বসতে দেয়া। এমনিভাবে কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করানো, কোনো অজ্ঞাত-অপরিচিত ব্য³কে পথের সন্ধান দেয়া, কলহে লিপ্ত দু’ব্য³রি মাঝে সন্ধি স্থাপন করে দেয়া—এসবই খেদমতে খলকের অন্তর্ভু³।
মানুষকে গোনাহ থেকে বাঁচানোও একটি খেদমত। এতে একজন মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতের নিয়ামতরাজি ভোগের সুযোগ করে দেয়া হয়, এর চেয়ে বড় খেদমত আর কি হতে পারে। এতদসত্ত্বেও যদি কেউ গোনাহ করতে থাকে, তাহলে তার ওপর জোরজরবদস্তি করা বা করজোরে তা থেকে পিছিয়ে যাওয়া কোনোটিই ঠিক নয়। কেননা অতিরি³ খোশামোদ ক্ষতি ও ঝগড়া-বিবাদের কারণ হতে পারে।
হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) স্বীয় ওস্তাদ হজরত শায়খুল হিন্দের (রহ.) এ ঘটনা বর্ণনা করেন, জনৈক ভদ্রলোক লক্ষেষ্টৗ থেকে হজরত শায়খুল হিন্দের (রহ.) খেদমতে উপস্থিত হলো। আর ওই ভদ্রলোকটি হলো একজন হিন্দু বেনিয়া। সে হিন্দু এবং তার সঙ্গে আগের কোনো সম্পর্কও ছিল না। এতদসত্ত্বেও বেনিয়াকে তার গৃহে আশ্রয় দিলেন এবং মেহমানদারী করলেন।
রাতে বারান্দায় একটি খাটে থাকার ব্যবস্থা করলেন। প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তাহাজ্জুদের সময় যখন ঘুম ভাঙল তখন এক অভিনব দৃশ্য দৃষ্টিগোচর করি। তাহলো হিন্দু ব্য³টি শুয়ে আছে আর হজরত শায়খুল হিন্দ (রহ.) তার পা দাবিয়ে দিচ্ছেন। ভদ্রলোক উঠে যেতে চাইলেও তিনি তাকে উঠতে দিচ্ছেন না। তবুও অন্যরকম এক অস্থিরতায় শেষ পর্যন্ত উঠেই পড়ল। মেহমানদের অন্য একজন এসে তাকে বললেন, হজরত আপনি এ কি করছেন! হজরত (রহ.) বললেন, সে আমার মেহমান। তার খেদমতের দায়িত্ব আমারই। দেখুন! একজন হিন্দু কাফেরের সঙ্গেও তাঁর আচরণ কেমন ছিল।
খেদমতে খালকের মাঝে কোনো বাদানুবাদ ও বিভাজন নেই। শুধু মানবতা ও মনুষ্যত্বের ভিত্তিতেই খেদমত করা উচিত। ইসলামে কাফেরদের অনুসরণ করা নিষেধ। তাদের ভ্রান্ত কাজে সম্পৃ³তাও নিষেধ। কিন্তু যেসব কাফেরের সঙ্গে মুসলমানদের নিয়মতান্ত্রিক যুদ্ধ নেই, তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে নিষেধ নেই। বরং তা সওয়াবের কাজ। এতে আল্লাহতায়ালাও খুশি হন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্য³ িদুনিয়াতে কোনো মুমিনের কাজকর্ম সহজ করে দেয়, আল্লাহতায়ালা ইহকালে ও পরকালে তার যাবতীয় বিষয়াদি সহজ করে দেবেন।’ তিনি দুনিয়াতে মানুষের সহায় হওয়ার কারণেই এ পুরস্কার লাভ করবেন।
প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক ব্য³ত্বি ডা. আবদুল হাই আরেফী (রহ.) বিভিন্ন সময় একথা বলতেন যে, আমি তোমাদের একটি বড় সাফল্যের কথা বলব, যা তোমাদের অনেকেরই জানা নেই। এটা এমন এক সাফল্য বা মর্যাদা, যা অর্জনে তোমাদের কেউ হিংসায় জ্বলে উঠবে না। আর ফজিলত—তা মানুষকে সোজা জান্নাতে নিয়ে যায়। সেই সাফল্য বা মর্যাদাটি হলো তুমি কারও খাদেম হয়ে যাও। এ মর্যাদার জন্য কেউ তোমার সঙ্গে ঝগড়া করতে আসবে না। কেউ কেড়ে নিতে চাইবে না যে, এটি আমাকে দিয়ে দাও। কেউ প্রতিহিংসায় জ্বলে উঠবে না। কেউ শত্রুতে পরিণত হবে না। কেননা এগুলো ‘মাখদুম’ বা খেদমত গ্রহণ করার কারণে হয়ে থাকে। খাদেম হওয়াতে ঝগড়ার কোনো অবকাশ নেই। তাহলে দেখবে কেউ তোমার মোকাবিলায় অবতীর্ণ হবে না। বরং তুমি সফলতার স্বর্ণশিখরে পৌঁছে যাবে।
সর্বোপরি এটি একটি ইবাদত। এর নগদ একটি ফায়দা এই, যে ব্য³ িখেদমত করবে হিংসা-বিদ্বেষ ও অহঙ্কার তার কাছেও ঘেঁষতে পারবে না। যদি কখনও অহঙ্কার এসে যায়, তখন সামান্য খেদমতের দ্বারাই তা দূর হয়ে যাবে। সুতরাং খেদমতে খালক অহঙ্কার দমনের এক মহৌষধ।
প্রত্যেকেরই নিজস্ব অবস্থানে থেকে খেদমতের জন্য লেগে যাওয়া জরুরি। আইনজীবীদের উচিত, আইন মারফত মাজলুমদের সাহায্য করা। তাদের মামলা-মোকদ্দমায় বিনা পারিশ্রমিকে সহায়তা করা। ডা³ারদের উচিত, প্রাথমিক ওষুধপত্রের মাধ্যমে সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। ফ্রি চিকিত্সার ব্যবস্থা করা এবং অতিরি³ ফি না নেয়া। এরকম প্রতিটি অঙ্গনের মানুষেরই নিজ নিজ পরিসরে খেদমতের সুযোগ কাজে লাগানো উচিত।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে অন্যের সেবায় কিছু করার তাওফিক দান করুন।


জিডিপিতে স্বেচ্ছাশ্রম সেবার অবদান ১.৭ শতাংশ

জিডিপিতে স্বেচ্ছাশ্রম সেবার অবদান ১.৭ শতাংশ


স্বেচ্ছাশ্রম সেবার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বাংলাদেশে নেই। তারপরও বছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১ দশমিক ৭ ভাগ অবদান রাখছে এই সেবা। টাকায় যার মূল্য ১১ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা।

সোমবার বিকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে স্বেচ্ছাশ্রম জরিপ বিষয়ক এক কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যার ব্যুরো ও ইউএনডিপির ইউএনভি প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে ২০১০ সালের এপ্রিলে এই জরিপ পরিচালনা করে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার। তিনি বলেন, ‘স্বেচ্ছাশ্রম সেবার জন্য বাংলাদেশে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই। তারপরও বাংলাদেশের সংস্কৃতি এমন যে একে অন্যের সাহায্যে সবসময় এগিয়ে আসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারও দারিদ্র দূর করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রাম (এনএসপি)।’

ন্যাশানাল সার্ভিস পলিসি দ্রুত কার্যকর করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল এজেন্সি থাকলে এই ধরনের স্বেচ্ছাশ্রম ও সেবামূলক কার্যক্রম আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতো। এজন্য সরকার দ্রুত ন্যাশানাল সার্ভিস পলিসিকে কার্যকরি করার উদ্যোগ নিচ্ছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার বলেন, ‘যুবকদের কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। যেসব স্বেচ্ছাসেবী এই ধরনের কাজে আগ্রহী তাদের প্রশিক্ষণ দিতে আমরা প্রস্তুত। দ্রুতই প্রশিক্ষণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

জরিপের ফলাফল বলা হয়, দেশের ১৫ বছরের উর্ধ্বে ৯ কোটি ৪৫ লাখ ১৯ হাজারের মধ্যে শতকরা ১৭ দশমিক ৫৫ জন অর্থাৎ ১ কোটি ৬৫ লাক্ষ ৮৬ হাজার এই ধরনের স্বেচ্ছাশ্রমে যুক্ত। এদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে থাকে ১৬ লাখ ৯ হাজার জন, অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেবা দিয়ে থাকে ১ কোটি ৪৭ লাক্ষ ২৯ হাজার জন আর উভয়ভাবে সেবা দেয় ২ লাখ ৪৯ হাজার জন।

এই ধরনের কাজে ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী লোকদের বেশি যুক্ত হতে দেখা যায়, যার পরিমাণ শতকরা ৩১ দশমিক ৩৬ ভাগ। এরপর ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী লোক যার পরিমাণ শতকরা ২১ দশমিক ৫২ ভাগ।

সবচেয়ে বেশি স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া হয় ধর্মীয় কাজে, যার পরিমাণ শতকরা ২৮ দশমিক ৬০ ভাগ। এছাড়া সামাজিক কার্যক্রমে (কমিউনিটি সার্ভিস) ২৪ দশমিক ৫৪ ভাগ, স্বাস্থ্যসেবায় সহায়তা ২১ দশমিক ৬০ ভাগ, শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা ১৫ দশমিক ৭১ ভাগ, ব্যক্তিগত ও সামাজিক খাতে সহায়তা ১১ দশমিক শূন্য ৪ ভাগ ও অন্যান্য খাতে স্বেচ্ছাশ্রম সহায়তা ১৬ দশমিক ৫১ ভাগ।

স্বেচ্ছাশ্রম কাজে সবচেয়ে বেশি যুক্ত ঢাকা বিভাগের অধিবাসীরা (৩৫ শতাংশ) ও সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগের অধিবাসীরা (৫ শতাংশ)। এছাড়া চট্টগ্রামে ২১ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ শতাংশ, খুলনায় ১৪ শতাংশ ও বরিশালে ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সচিব রীতি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সচিব মাহবুব আহমেদ, ইউএন রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটর নীল ওয়াকার, ইউএনভির সাউথ এশিয়া ডেভিলপমেন্ট ডিভিশনের সিনিয়র পোর্টফোলিও ইব্রাহিম হুসাইন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শাজাহান মোল্লা প্রমুখ।

১৮ জুলাই ২০১১

Saturday, October 12, 2013

স্বেচ্ছাশ্রম: পরিচয় ও গুরুত্ব

স্বেচ্ছাশ্রম: পরিচয় ও গুরুত্ব
-ওসামা বিন নূর

আজ(০৫ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস। সেবার প্রতি ব্রত নিয়ে দিবসটির আগমন। সেবাই প্রকৃত ধর্ম। আর সেই সেবার মনমানসিকতা নিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে স্বাধীনভাবে নির্দিষ্ট সময়, কর্মশক্তি ও দক্ষতার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করাকে স্বেচ্ছাসেবা বলা হয়। স্বপ্রণোদিত হয়ে সামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজ এবং সম্ভাবনাময় উদ্যোগ গ্রহণ করে সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবা করা যায়। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে আজ গ্রাম-গ্রামান্তরে স্বেচ্ছাশ্রমের আগ্রহ বেড়েছে। দেশপ্রেমের মূলমন্ত্র থেকেই স্বেচ্ছাসেবার জন্ম।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জন হলো স্বেচ্ছাশ্রমের বড় উদাহরণ। দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন লাখো বাঙালি আর আমাদের দিয়ে গেছেন স্বাধীন ভাষা, স্বাধীন রাষ্ট্র। এ ছাড়া এ বছরের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে আটকে থাকা শ্রমিক উদ্ধারের ঘটনাও বড় বিষয়। আমাদের এ রকম নানা দুর্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের দৃষ্টান্ত আমরা দেখি। স্বেচ্ছাশ্রম একটি সমষ্টিগত কল্যাণ প্রচেষ্টা। আমাদের রয়েছে প্রচুর জনসম্পদ। এই জনসম্পদকে যদি স্বেচ্ছাসেবায় আগ্রহী করে তোলা যায়, তাহলে সবার পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে।
ব্যক্তি তার দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্নভাবে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করতে পারে। যার যার অবস্থান থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী সেটা যেমন সশরীরে হতে পারে, তেমনি ইন্টারনেটের যুগে ভার্চুয়ালিও হতে পারে। ছোট ছোট কাজ_ রাস্তার পাশে বৃক্ষ রোপণ করা যেমন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, তেমনি পরিবেশ রক্ষায় অন্যান্য কাজসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সুনামি, ভূমিকম্প, বন্যা, হারিকেন ইত্যাদি অবস্থায় জরুরিভাবে স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত করাও এর অন্তর্ভুক্ত।
স্বেচ্ছাসেবার নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হতে পারে, আবার কমিউনিটিতে নিজস্ব এলাকায় সব সমস্যা দূরীকরণে একটি স্বেচ্ছাকর্মী দল গঠন করে তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কমিউনিটি সমস্যার সমাধানে হতে পারে। যেমন, গ্রামের ভাঙা রাস্তা মেরামতে সবাই যৌথভাবে কাজ করে রাস্তা ঠিক করা বা এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকলে সবার সহযোগিতায় ডাস্টবিন স্থাপন ইত্যাদি।
উন্নয়নশীল দেশগুলো স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে তাদের নিজেদের, সমাজের ও দেশের উন্নয়ন করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে। কানাডায় ২০১০ সালে ১২ মিলিয়ন কানাডিয়ান বা ৪৫% জনগণ (১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব) দেশের উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবা দিয়েছে, যা ২ মিলিয়ন ঘণ্টার সমপারিমাণ অথবা ১ মিলিয়ন ফুলটাইম চাকরির সমপরিমাণ। গড়ে বছরে একজন স্বেচ্ছাসেবক ১৬৮ ঘণ্টা সামাজিক উন্নয়নে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছে। আমেরিকাতে গত বছর ৬৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ দেশের জন্য স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছে। বিভিন্ন দেশে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করতে স্বেচ্ছাসেবকদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মানিত করে 'দি প্রেসিডেন্ট ভলান্টিয়ার সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড' দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সরকারও যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রতি বছর যুব অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে থাকে। 
উন্নত বিশ্বের স্বেচ্ছাশ্রমের পরিসংখ্যান খুবই ঈর্ষণীয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যানে বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবকদের যে সংখ্যা উল্লেখ আছে তা খুবই নগণ্য। আশার বিষয় হলো, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অনেক অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ শুরু করেছে, যারা সরকারের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে। 
স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে যেমন দেশসেবা, জনসেবা হয়; তেমনি আরও সুফলও রয়েছে। নতুনদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চমৎকার সুযোগ এটি। এর মাধ্যমে নতুন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা যায়। স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে ভালো কাজের আত্মতৃপ্তিও আসে। 
আমাদের দেশে দলগতভাবে স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত এ রকম কিছু প্রতিষ্ঠান- ইউনাইটেড নেশন ভলান্টিয়ার-বাংলাদেশ, ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি প্রভৃতি। 


Thursday, September 5, 2013

সৃষ্টির সেবায় স্রষ্টার সন্তুষ্টি

সৃষ্টির সেবায় স্রষ্টার সন্তুষ্টি


সারা দুনিয়ার সমস্ত মাখলুক আল্লাহর পরিবার। আল্লাহর পরিবারের সেবায় আল্লাহ খুশি হন। সেবা আল্লাহ তাআলার নিকট অত্যধিক প্রিয় একটি আমল। রাসূলুল্লাহ সা. সেবার কাজ নিজে করেছেন, সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং এই সেবার কাজে আজীবন তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও, আসমানের মালিক তোমার প্রতি সদয় হবেন।’ {তিরমিযী শরীফ, হাদীস-১৮৪৭}

রাসূলুল্লাহ সা.-এর প্রতি সর্বপ্রথম যেদিন ওহী নাযিল হয়, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তিনি বাসায় ফেরেন এবং খাদিজাতুল কুবরা রাযি.কে গায়ের উপর কম্বল দেয়ার জন্য বলেন, সেদিন হযরত খাদিজা রাযি. তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘কক্ষনো নয়, আল্লাহ আপনাকে কখনো বে-ইজ্জত করবেন না। কারণ, আপনি আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করেন, গরীব-দুঃখীদের জন্য কাজ করেন, অসহায়-এতিমের বোঝা লাঘব করেন। তাদের কল্যাণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।’ {বুখারী শরীফ, হাদীস-৪৫৭২}
যারা সমাজের মানুষের উপকারার্থে সর্বদা নিয়োজিত থাকেন, আল্লাহ কখনো তাদেরকে অপমানিত করেন না। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘খরচ কর আল্লাহর পথে, নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। উত্তমরূপে নেক কাজ আঞ্জাম দাও। এভাবে যারা নেক কাজ আঞ্জাম দিতে যত্নবান, নিশ্চয় আল্লাহ তাদের ভালবাসেন।’ {সূরা ২ বাকারা, আয়াত-৯৫}
সৃষ্টির সেবা তথা মানব সেবা দুই প্রকার। আত্মিক সেবা ও শারীরিক সেবা। আত্মার সেবা হচ্ছে, আত্মার পরিপুষ্টতা যেসব কারণে হয় তার এন্তেজাম করা। যেমন ইলম শিক্ষা করা ও তার উপর আমল করা। যিকির-ফিকির ও আল্লাহর মারেফাত অর্জনের যাবতীয় বিষয় এর মধ্যে শামিল। যা হক্কানী পীর মাশায়েখ ও আলেম সমাজ সব সময় আঞ্জাম দিয়ে আসছেন। আর শারীরিক সেবা হচ্ছে বস্ত্তজগতে বাস করতে গেলে খাবার-দাবার, ঘর-বাড়ি, ঔষধ-পথ্য ইত্যাদি যা যা প্রয়োজনীয় বস্ত্ত একজন মানুষের জীবনে প্রয়োজন হয়, সেগুলোর এন্তেজাম করা। শারীরিক সেবার চাইতে আত্মিক সেবা যে উত্তম, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবুও অনেক সময় শারীরিক সেবার মধ্য দিয়ে আত্মার সেবাও অনায়াসে করা যায়। এই মানব সেবা ও আখলাকের কারণেই ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.-এর প্রতি আরবের তাবৎ কাফের গোষ্ঠী একের পর এক ঝুঁকে পড়েছিল। আপনি দেখুন না, সবাই যেখানে মুহাম্মাদের ভয়ে ঘর-বাড়ি ফেলে অন্য কোথাও একটু আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করছিল, সেখানে এক বৃদ্ধা মহিলাও তার গাঁট্টি-বোচকার বোঝা মাথায় নিয়ে তাড়াতাড়ি পলায়ন করছিল। কিন্তু বয়সের ভারে ও বোঝার চাপে বৃদ্ধা অনেক পিছনে রয়ে গেল। ইত্যবসরে এক সুদর্শন যুবক এসে বৃদ্ধার মাথার বোঝাটি চেয়ে নিয়ে নিজ মাথায় বহন করে তার গন্তব্যস্থল নিজ খান্দানের কাছে পৌঁছে দেন। যুবকের এ সেবায় প্রীত হয়ে তার পরিচয় জানতে চাইল বৃদ্ধা। কে এই মহৎ ব্যক্তি, আজ এই মহা সংকটের সময় আমার এত বড় উপকার করে দিল? খান্দানের লোকেরা বলল, যে মুহাম্মাদের ভয়ে তুমি এখানে ধেয়ে এসেছ, সেই তো ঐ যুবক! তখন সাথে সাথে বৃদ্ধা ইসলামের কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল এবং বলল, এ মহান ব্যক্তি কখনো মিথ্যা বলতে পারে না। তিনি যা বলেছেন, তাই সত্য। এইতো ছিল সেবার অবদান।
বিশাল এই সৃষ্টি জগত মহান আল্লাহর অস্তিত্বের নিদর্শন। সৃষ্টি জগতের সব কিছুই স্রষ্টার পরিচয় বহন করছে। সৃষ্টির মাঝেই স্রষ্টার পরিচয় লুকিয়ে আছে। তাই সৃষ্টি হল স্রষ্টার পরিচয় লাভের মাধ্যম। মহান আল্লাহর ঘোষণা, ‘তারা উষ্ট্রীর দিকে কেন দৃষ্টিপাত করে না! কিভাবে তিনি তা সৃষ্টি করেছেন এবং আসমানের দিকেও, কিভাবে তা সুউচ্চ করেছেন।’ {সূরা ৯৬ আলাক, আয়াত-১৭-১৮}
আসমান-যমীন পাহাড়-পর্বত, সাগর-নদী এগুলোর রহস্য আজো অনুদঘাটিতই থেকে গেছে। এ সবের প্রতি দৃষ্টি দিলে মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের পরিচয় পাওয়া যায়। সৃষ্টির মাঝে যেমন স্রষ্টার পরিচয় লুকিয়ে আছে, অনুরূপভাবে সৃষ্টির সেবার মাঝে লুকিয়ে আছে স্রষ্টার সন্তুষ্টি। যে ব্যক্তি যত বেশি সৃষ্টির সেবা করবে, সে তত বেশি স্রষ্টার কুদরত প্রত্যক্ষ করবে এবং কুদরতীভাবে সে আল্লাহর সাহায্য লাভ করবে।
‘অবশ্যই একজন মুসলমানের সাদকা তার হায়াত বৃদ্ধি করে, অপমৃত্যু থেকে বাঁচায়, তার থেকে অহংকার ও অহমিকা মহান আল্লাহ দূর করে দেন।’ {মুজামুল কাবীর, হাদীস-১৩৫০৮} সুতরাং দরিদ্র শ্রেণীর লোকদের আর্থিক সহায়তা দান বা অন্য যে কোনভাবে উপকার সাধন করাটা ধনবানদের নিজের স্বার্থেই জরুরী। দরিদ্র মানুষকে দান-সদকা করে ধনীরা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে। এ বিচারে গরীবরা ধনীদের জন্য চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করে থাকে। মিসকিনদেরকে সদকা করে এর ফল তাৎক্ষণিক মৃত আপনজনদের রূহে পৌঁছানো সম্ভব হয়। এ বিবেচনায় মিসকিনরা ধনীদের আত্মীয়-স্বজনদের পরকালীন সুখ প্রাপ্তির মাধ্যম হয়ে থাকে। ধনীরা দান-খয়রাতের মাধ্যমে মিসকিনদের দুআ লাভ করে। সদকার মাধ্যমে ধনীদের ধন-সম্পদ যাবতীয় বালা-মছিবত থেকে নিরাপদ থাকে। হাশরের ময়দানে দানশীল ধনীদের জন্য নেককার দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে। এই সবকিছুর আলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, প্রকৃতপক্ষে ধনীরা দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের প্রতি যে কোন ধরণের সহায়তা করে বা দান-খয়রাত করে তাদের প্রতি অনুগ্রহ করে না, বরং নিজেরাই নিজেদের প্রতি অনুগ্রহ করে। এ ক্ষেত্রে দরিদ্ররা শুধু উপলক্ষ্য হয়ে থাকে মাত্র। হাদীস শরীফে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তা করাকে স্বয়ং আল্লাহ তাআলর সেবা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি পীড়িত হয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে দেখতে আসনি। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক প্রভু! (তুমি কিভাবে পীড়িত হয়েছিলে, আর) আমি তোমাকে কিভাবে দেখতে আসবো? অথচ তুমিই সমস্ত জগতের প্রতিপালক প্রভু। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা পীড়িত হয়েছিল, আর তুমি তাকে দেখতে যাওনি? তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, নিশ্চয়ই আমাকে তার নিকট পেতে? আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি তোমার নিকট খাবার চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে আমর রব, (তুমি কবে আমার কাছে খাবার চাইলে আর) আমি তোমাকে কিরূপে খাবার দিব? অথচ তুমিই জগতের প্রতিপালক প্রভু। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট খাবার চেয়েছিল আর তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে খাবার দিতে, নিশ্চয় তুমি আমাকে তার নিকট পেতে। আল্লাহ আবার বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি তোমার নিকট পানি চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে,যদি তুমি তাকে পানি পান করাতে, তুমি তখন আমাকে তার নিকট পেতে। {মুসলিম শরীফ, হাদীস-৪৬৬১}
উল্লেখিত হাদীস থেকে বোঝা যায়, অসুস্থ, অভাবী, ক্ষুধার্ত ব্যক্তির সহায়তা করা যেন মহান আল্লাহকেই সহায়তা করা। প্রশ্ন হতে পারে, আল্লাহ তো অমুখাপেক্ষী, তাঁর তো কোন সহায়তার প্রয়োজন নেই। আসলে এখানে আল্লাহর সহায়তার উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর পক্ষ থেকে নিজেই সহায়তা লাভ করা, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। অসুস্থ ক্ষুধার্ত অভাবী মানুষকে সহায়তা করলে তারা যেমন খুশী হয়, অনুরূপভাবে তাদের খুশীর চেয়ে মহান আল্লাহ আরো অনেক বেশি খুশী হন। কেননা আল্লাহ তাদের স্রষ্টা, তারা আল্লাহর সৃষ্টি। সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার চেয়ে বড় দরদী আর কেউ হতে পারে না। তিনিই তো মহান আল্লাহ, সীমাহীন দাতা, দয়ালু।
আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে ধনী ও গরীব দু’টি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। কিছু মানুষকে বিশেষ দয়ায় বহু নিয়ামত দিয়েছেন, আর কিছু কিছু মানুষকে বিশেষ হিকমতের কারণে সম্পদের প্রাচুর্য থেকে বঞ্চিত করেছেন, যারা স্বভাবতই ধনীর সম্পদের মুখাপেক্ষী। ধনী ও গরীবের এ ব্যবধান কারো প্রতি জুলুম নয়। আল্লাহ তাআলা ইচ্ছে করলে সবাইকে সমান করতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। কারণ, এ ব্যবধান পৃথিবীর ভারসাম্যের জন্য অপরিহার্য। নিজের যোগ্যতা আর বুদ্ধির বলে আসলে কেউ সম্পদশালী হতে পারে না। বুদ্ধি আর যোগ্যতাই যদি সম্পদশালী হওয়ার মাপকাঠি হত, তাহলে সব বুদ্ধিমানরাই সম্পদশালী হয়ে যেত। বাস্তবে দেখা যায় অনেক বুদ্ধিমান শিক্ষিত মানুষ অভাবগ্রস্থ ও দরিদ্র হয়ে আছে। আবার অনেক অশিক্ষিত হাবাগোবা ধরণের মানুষ বহু সম্পদের অধিকারী হয়ে বসে আছে। সম্পদের এই বণ্টন ব্যবস্থা মূলত আল্লাহ কর্তৃক বিশেষ উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। আল্লাহ পাক মূলত মানুষকে পরীক্ষা করার জন্যই ধনী-গরীবের এই ব্যবধান সৃষ্টি করেছেন। ধনী তার প্রাচুর্যের মাঝে ডুবে গিয়ে মহান আল্লাহকে ভুলে যায় কি না? আর গরীব তার অভাবের কারণে নাফরমানীতে লিপ্ত হয় কি না? এই পরীক্ষা গ্রহণ করাই হল ধনী-গরীবের ব্যবধানের মূল কারণ। আমাদের করণীয় হল, সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকা। তবে সন্তুষ্ট থেকে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। বরং নিজের সাধ্যানুযায়ী হালাল উপার্জন করাও একটি ইবাদত। মহান আল্লাহর ঘোষণা, ‘যখন নামায শেষ হয়ে যাবে, তখন তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং অনুসন্ধান কর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিযিক)’ {সূরা ৬২ জুমআ, আয়াত-১০}
মানুষ সামাজিক জীব হওয়ার কারণে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। মানুষের এই নির্ভরশীলতাই মূলত মানুষকে জানিয়ে দিতে চায় যে, তুমি অপরের সেবার উপর নির্ভরশীল। ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ সবাইকে কারো না কারো সেবা গ্রহণ করতেই হবে। মানুষের জন্মের সূচনাতেই মানুষ অপরের সেবার উপর নির্ভর করেই বেড়ে ওঠে। অনুরূপভাবে শেষ মুহূর্তে কাফন-দাফনের সময়েও মানুষ পুরোপুরি অপরের সেবার উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ মানুষের শুরু এবং শেষটা যেহেতু অপরের সেবার উপর নির্ভরশীল, তাই মানুষের জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়টাতেও একে অপরের সেবক হয়ে থাকতে হবে। মানুষের এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতা মানুষকে একে অপরের সেবা করার সবক দিতে চায়। সৃষ্টির প্রতি সেবা করা- এর বহুমুখী ধরণ আছে। আত্মিক সেবা ও শারীরিক সেবার বিষয়টি দৈনন্দিন জীবন থেকে আরম্ভ করে আন্তর্জাতিক জীবনের সকল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান ইত্যাদি সকল বিষয়েই সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বস্ত্তবাদী সভ্যতা যেখানে সেবাকে প্রাধান্য না দিয়ে শুধু উপার্জন আর পুঁজি সমৃদ্ধ করার বিষয়কেই প্রাধান্য দিচ্ছে, সেখানে ইসলামের সেবার মহৎ দিকটি আমাদের নিজেদের মাঝে আমলী রূপ দিতে হবে। কেবলমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই সৃষ্টির সেবা করতে হবে। সেবার প্রতিদান সৃষ্টির কাছ থেকে আশা করা বোকামী। কেননা, যে নিজেই সেবার মুখাপেক্ষী, সে কিভাবে সেবার প্রতিদান দেবে। বরং যিনি কারো কোন রকম সেবার মুখাপেক্ষি নন, যাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না, তার কাছ থেকেই সেবার প্রতিদান আশা করা উচিত। তাই ইসলাম সেবা করাকে অপরের সুবিধা হিসেবে বিবেচনা করে না, বরং সেবার মাধ্যমে সেবক নিজেই উপকৃত হয়। সেবার বহুমুখী উপকারের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ উপকার ও প্রাপ্তি হল, স্রষ্টার সন্তুষ্টি। মনে রাখতে হবে, সৃষ্টির সেবায় লুকিয়ে আছে স্রষ্টার সন্তুষ্টি।



লেখক,মাওলানা কাজী ফজলুল করিম।
মুহাদ্দিস ও খতীব, কারবালা মাদরাসা, বগুড়া। 
e-mail : kf.karim@yahoo.com